ঈদ স্পেশাল
রোস্টিং কফি খেতে উত্তরার বিনস অ্যান্ড অ্যারোমা

উত্তরার জসীমউদদীন এভিনিউ ধরে সোজা চলে গেলে সেক্টর-৩, রোড-১৮ পড়বে ডান দিকে আর বাম দিকে বাড়ি নম্বর ৯-এ অবস্থান বিনস অ্যান্ড অ্যারোমার। বাইরে বেশ চোখে পড়ার মতোই এর সাইনবোর্ড। একেবারে সিনেমা হলের আদলে বিলবোর্ড! কাচের দারজা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই পেয়ে যাবেন কফির স্নিগ্ধ ছোঁয়া। ঠান্ডা পরশ আর হালকা আলো আপনাকে মুহূর্তের মধ্যেই বের করে নিয়ে আসবে শহরের কোলাহল থেকে। তবে শপটির ভেতরে ঢুকতেই আপনার মনে হতে পারে, এটা বিদেশি কোনো চেইন শপ। কিন্তু না, এটা পুরোপুরি দেশীয়।
কফিশপের একজন স্বত্বাধিকারী তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত আকর্ষণ ছিল কফির প্রতি। তাই কফি নিয়ে বেশ পড়াশোনাও করেছিন। এ ছাড়া ঘুরে বেড়িয়েছি অনেক দেশ। তাই দেশভেদে কফির পরিবর্তন বা স্টাইল আমি খেয়াল করেছি বিশেষভাবে। এসব কিছুর প্রতিফলন ঘটিয়েছি এ কফিশপের মাধ্যমে।’
শপটি মূলত চার ব্যক্তির উদ্যোগে গড়ে উঠেছে। তবে শখের বশে নয়, দেশীয় একটি ব্র্যান্ড কফিশপ গড়ে তোলা তাঁদের মূল লক্ষ্য বলে জানান তারিকুল ইসলাম। ইন্টেরিয়রজুড়ে রয়েছে এক নীরবতার ছোঁয়া। শপটি ঘুরে মিলবে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন জোন। তবে প্রতিটি জোনই আপনাকে ঘুরেফিরে মনে করিয়ে দেবে, এটা কফিশপ। শপটিতে ঢুকেই বাম পাশে রয়েছে বেশ কিছু বসার জায়গা। এখানে বসলেই আপনার নজর কাড়বে টেবিলের সাইডে রাখা কাচের নিচের কফি বিনগুলো। রোস্টেট কিছু কফি বিন জায়গা করে নিয়েছে টেবিলের কর্নারটিতে।
আপনি চাইলে টেবিলে বসেই অর্ডার দিতে পারবেন অথবা কাউন্টারে যেতে পারেন। হট অথবা কোল্ড সব ধরনের কফিই এখানে রয়েছে। এর পাশাপাশি পাবেন চা-ও। কফির পাশাপাশি পেস্ট্রি, কুকিজ এবং স্ন্যাক্স আইটেম। কফির প্রায় সব ফ্লেভারই মিলবে বিন্স অ্যান্ড অ্যারোমায়। তবে ভোজনরসিকদের কথা মাথায় রেখে একটু ভারী আইটেমও রাখা হয়েছে শপটিতে। তাই ইচ্ছা করলেই কফি খেতে এসেই সেরে ফেলতে পারবেন লাঞ্চ বা ডিনার। তবে ইন্টেরিয়রে রাজকীয়তা এনেছে কর্নারগুলোতে রাখা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের বিভিন্ন ধরনের গাড়ির ডিজাইন। এ ছাড়া শপটি ঘুরে দেখলে আরো একটি জিনিস আপনার নজর কাড়বে, তা হলো একটি মানচিত্র। পৃথিবীর ঠিক কোথায় কোথায় কফি হয়, সম্পূর্ণই এখানে তুলে ধরা আছে।
কফির রয়েছে অনেক ধরন আর প্রক্রিয়ার নানা প্রণালি। কিন্তু সহজভাবে বললে প্রথম অবস্থায় কফি থাকে একটি গ্রিন বিন, যা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কফি বিনে রূপান্তরিত করা হয়। প্রথম অবস্থার গ্রিন বিনটি অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই গ্রিন বিনকে বিভিন্ন তাপমাত্রায় রোস্ট করা হয়, যার সর্বশেষ রূপ হচ্ছে কফি বিন। তবে এই কফি বিনটির মেয়াদ থাকে দুই সপ্তাহ। এ সময় শেষ হয়ে গেলে কফির তাজা ফ্লেভারটি আপনি আর পাবেন না। তারিকুল ইসলামের তথ্যমতে, তাঁরা বিদেশ থেকে গ্রিন বিনটি নিয়ে আসেন এবং এখানে রোস্টিংয়ের কাজটি করেন। তাই পিয়র কফির টেস্ট তাঁরাই দিতে পারেন বলে দাবি বিন্স অ্যান্ড অ্যারোমার এই স্বত্বাধিকারীর। যদি কোনো রোস্টিং কফির বয়স দুই সপ্তাহের বেশি হয়ে যায়, তবে বাকিটা ফেলে দেওয়া হয়। কফির সঙ্গের অন্যান্য আইটেমের বেশির ভাগই খাবার লিখিত মেন্যু। ফলে খাবারের টেস্টও ঠিক থাকে সব সময়। চাইলে কাস্টমার নিজে গিয়ে দেখতে পারেন তার খাবারটি কীভাবে বানানো হচ্ছে।
শপটিতে ব্যবহার হয়েছে ডিজিটাল বেশ কিছু প্রযুক্তি। আপনি অর্ডার দেওয়ামাত্রই আপনাকে দেওয়া হবে একটি গেজেট, যা খাবার তৈরি হলেই ভাইব্রেশন করবে এবং লাইট জ্বলতে থাকবে। ফলে সার্ভিসম্যান কোনো হ্যাসেল ছাড়াই আপনাকে খুঁজে বের করতে পারবে। তবে এখানে বিখ্যাত কফিগুলো মধ্যে রয়েছে এসপ্রেসো ১২৫ টাকা, ক্যাপোচিনো ১৯৫ আর মোকা ২১৫ টাকা।