ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগের জন্য সেপ্টেম্বর মাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ

ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগের জন্য সামনে সেপ্টেম্বর মাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ মাসে সাধারণত মশাবাহিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয় ও বেশি মারা যায় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। তাই এখন থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কাবিরুল বাশার।
রোববার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীর একটি হোটেলে ইনার হুইল ক্লাব অব জাহাঙ্গীরনগর ঢাকার উদ্যোগে ডেঙ্গু বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সেমিনারে ড. কাবিরুল বাশার এসব কথা বলেন।
ইনার হুইল ক্লাব অব জাহাঙ্গীরনগর ঢাকা’র উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন— ইনার হুইল ক্লাব জেলা–৩২৮, বাংলাদেশের চেয়ারম্যান জেসরিনা হায়দার।
এ সময় অধ্যাপক ড. কাবিরুল বাশার বলেন, জমা পানি মানেই এডিস মশা। তাই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। আশেপাশে কোথাও যেন জমা পানি না থাকে।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু প্রসঙ্গে ড. কাবিরুল বাশার বলেন, সচেতন থাকলে ডেঙ্গুতে কোনো রোগীর মৃত্যু হওয়ার কথা না। পর্যাপ্ত পানি ও তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না।
কীটতত্ত্ববিদ বাশার বলেন, আমরা ডেঙ্গু হলে শুধু ডাবের পানির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি— এটা ঠিক না। ডাবের পানি খাবেন, কিন্তু সারাক্ষণ শুধু ডাবের পানিই খেতে হবে তা না। সঙ্গে সঙ্গে ফলের ওপরও বেশি জোর দিতে হবে। ফল বলতে দামি ফল হতে হবে তা না— দেশি ফল কম দামে পাওয়া যায়, তা খেতে পারেন। চামড়া মোটা এমন ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, জাম্বুরা— এটাতে কোনো কীটনাশক কেউ ব্যবহার করে বলে মনে হয় না, আবার আমড়ার দাম একটু কম— সেটাও খেতে পারেন।
ড. বাশার অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ, যার প্রধান কারণ নাগরিকদের অসচেতনতা। তিনি বলেন, প্রত্যেক নাগরিক যদি নিজের অবস্থান থেকে সচেতন হয়ে কাজ করে, তাহলে এটি এক সময় সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হবে। আর তখনই ডেঙ্গুর প্রকোপ ও এডিস মশার ঘনত্ব কমে আসবে।
ড. বাশার আরও বলেন, আবার অনেক সময় দেখা যায়, জ্বর ভালো হয়েছে তো ঔষধ বা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলেন না। কিন্তু বাস্তবতা হলো— ডেঙ্গু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেউ মারা যায় না, সপ্তম থেকে নবম দিনে বেশি মারা যায়।

এ সময় অধ্যাপক ড. কাবিরুল বাশার মশাবাহিত রোগে দেশে নারীদের মৃত্যুহার বেশি উল্লেখ করে বলেন, আমাদের দেশে নারীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় কম, মারা যায় বেশি। কারণ শুরুতে জ্বর হলে তারা বাইরে ডাক্তার বা হাসপাতালে ভর্তি হতে চান না— স্বামী, বাচ্চা, সংসারের কথা চিন্তা করে। পরে যখন যান তখন তাদের আর বাঁচানো যায় না।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ড. কাবিরুল বাশার বলেন, ইন্টিগ্রেটেড মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার চারটি উপাদানই জরুরি— পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, জীবাণু নিয়ন্ত্রণ, রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এই চারটি উপাদানকে একত্রে প্রয়োগ করতে না পারলে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। এডিস মশা দেখতে কেমন, লার্ভা কেমন, কোথায় জন্মায় এসব জানতে হবে। তখন সে নিজে সতর্ক হতে পারবে ও আশপাশকে নিরাপদ রাখতে পারবে।
কীটতত্ত্ববিদ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, জিকা ও ফাইলেরিয়াসিস বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে ইনার হুইল ক্লাব জেলা–৩২৮ এর বিভিন্ন সদস্য ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সামাজিক উদ্যোগ, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠান শেষে আয়োজকরা উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান ও ভবিষ্যতে এ ধরনের সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।