শিশুর ত্বকে সমস্যা ও লক্ষণ

শিশুর ত্বকে বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৫৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. রোকন উদ্দিন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : শিশুদের ত্বকে কী ধরনের সমস্যা হয়?
উত্তর : শিশুদের ত্বক বড়দের ত্বকের থেকে একটু আলাদা। ওদের সমস্যাগুলো কিছুটা আলাদা হয়। সাধারণত বাচ্চারা বিভিন্ন ভাইরাল রোগ, ব্যাকটেরিয়াল রোগ, ফাঙ্গাল রোগ—এগুলোতে বেশি ভোগে। এতে বড় একটি দল ভোগে। আর কিছু ছোঁয়াচে অসুখ, যেমন—স্ক্যাবিজ হতে পারে। এ ছাড়া কিছু জন্মগত ত্রুটি, যেমন—ডার্মাটোসিস, ল্যাকেমপেনাস বা অন্যান্য রোগে ভুগতে পারে। একদম ছোট বাচ্চারা, যেমন—নবজাতক, এরাও কিছু রোগে ভোগে।
প্রশ্ন :শিশু চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে, সেটা কী কী লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে?
উত্তর : এটিতে যাওয়ার আগে বাচ্চাদের ত্বক কেন আলাদা, আমি সেটি একটু বলে নিই। বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের চামড়া পাতলা। আমাদের বাইরের আবরণ যেটা সাধারণত সুরক্ষায় কাজ করে, বাইরের ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ঢুকতে দেয় না—সেই আবরণ প্রায় ৩০ ভাগের মতো পাতলা। এতে সহজেই বিভিন্ন রোগজীবাণু ঢুকতে পারে।
দুই নম্বর সমস্যা হলো, বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এতে সহজেই সংক্রমণ হয়ে যায়। কোনো একটি জায়গা চিরে গেল বা ফেটে গেল, এতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে না, তবে বাচ্চাদের সমস্যা হচ্ছে। অনেক ব্যাকটেরিয়াল ইনফরমেশন আমার হচ্ছে, তবে আমার পাশের আরেকজনের হচ্ছে না। বাচ্চাদের মধ্যে এটা কিন্তু একজন থেকে আরেকজনের ক্ষেত্রে ছড়াচ্ছে। কারণ, বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
আমাদের দেশে একটি বড় সমস্যা রয়েছে। এটা এমন যে মায়েরা যখন বাচ্চার চোখে সমস্যা হচ্ছে, তখন চোখের চিকিৎসক দেখাচ্ছেন। কানে যখন সমস্যা হচ্ছে, কানের চিকিৎসক দেখাচ্ছেন। তবে যখন চামড়ায় সমস্যা হচ্ছে, চামড়ার চিকিৎসকরা প্রথম অবস্থায় দেখতে পান না, অন্য চিকিৎসকরা দেখেন। এই জায়গাটায় বাচ্চাদের মা-বাবার অবশ্যই একটু সচেতন হতে হবে। চোখের চিকিৎসক হলে যদি চোখের চিকিৎসক দেখানো হয়, চামড়ার চিকিৎসায় চামড়ার চিকিৎসক কেন নয়? আরেকটি বিষয় হলো, সমস্যাগুলো রোগভেদে একেক সময় একেকভাবে প্রকাশিত হবে। সব যে একই রকম হবে, তা নয়। তবে বেশিরভাগ শিশুই ভোগে এটোপিক ডার্মাটাইটিস রোগে।
প্রশ্ন : লক্ষণগুলো কী?
উত্তর : এটোপিক ডার্মাটাইটিস হচ্ছে আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, তার প্রভাবে বাচ্চাদের চামড়ার মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হওয়া। এই বাচ্চার মায়েরা কিন্তু বলছেন, আমার বাচ্চাকে মশা কামড় দিলে ওই জায়গাটা ফুলে যায়। অনেক সময় পেকে যায়। আবার বাচ্চার যেই জায়গাগুলো খোলা থাকে, যেমন—হাত-পা, সেই জায়গাগুলো কালো হয়ে যাচ্ছে বা দুদিন পরপর সেখানে সংক্রমণ হয়ে যাচ্ছে। আবার বাচ্চা যে পানি ধরছে বা সাবান ধরছে, তাতেও সমস্যা হচ্ছে।
কেবল ধুলাবালি, সাবান, পানি, ঘাম—এতে যে সমস্যা হবে, সেটি কিন্তু নয়। আমরা ভদ্রলোক হওয়ার জন্য কিছু জিনিস করে ফেলেছি। যেমন ডায়াপার ব্যবহার করার জন্য ডায়াপার ডার্মাটাইটিস বলে একটা অসুখ তৈরি হয়েছে, এটা তো আগে ছিল না। এসি আসার জন্য, কার্পেট ব্যবহার করার জন্য, ধুলাবালি হওয়ার জন্য বিভিন্ন মাইট আমরা ঘরের মধ্যে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমাদের ছোটবেলায় এগুলো ছিল না। এতে এই জিনিসগুলোও আমাদের এটোপিক ডার্মাটাইটিসকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে এটোপিক ডার্মাটাইটিসের খাবারের সঙ্গেও সম্পর্ক আছে বা থাকতে পারে। আমি বলব, মা-বাবারা যেন খাবারের দিকে নজর দেন।
ধুলাবালি, ঘাম, সাবান, পানি ইত্যাদি অসুখকে বাড়িয়ে দেয়। প্রাথমিক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সংক্রমণ হয়, চুলকানি হয়। বাচ্চাগুলোর প্রধান সমস্যা চুলকানি এবং রাতে ঘুমাতে পারে না। তার ঘুমের অসুবিধা হয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমরা যদি এই বাচ্চাগুলোর দিকে নজর না দিই, বাচ্চাগুলোর মস্তিষ্ক বৃদ্ধির সময় তিন বছর পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত বাচ্চাগুলো রাতে ঘুমাতে পারবে না। পর্যাপ্ত ঘুম হবে না। বাচ্চাগুলো বিরক্ত থাকবে। বৃদ্ধিটা ঠিকমতো হবে না। শেষ পর্যন্ত একটা হাবাগোবা বাচ্চা পাব। বাচ্চাটা হয়তো ভালো একটি বাচ্চা ছিল, কিন্তু সামান্য সচেতনতার অভাবে দেখা গেছে একটা বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। আমি বলছি, আমার বাচ্চাটা বুদ্ধিমান ছিল, তবে যত বয়স হচ্ছে সে বোকা হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলোতে অবশ্যই বাবা-মায়ের সচেতন হওয়া উচিত। কারণ, ঘুম খুব জরুরি বাচ্চাদের জন্য। ঘুমের অসুবিধা খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দেবে। স্কুলের ফলাফল খারাপ করাবে। বাচ্চা বিরক্ত হয়ে যাবে।