নারীর পদ্মরোগ হলে কী সমস্যা হয়?

প্রলাপস ইউটেরাস বা জরায়ু নিচের দিকে নেমে আসা একটি প্রচলিত সমস্যা। এটিকে বাংলায় পদ্মরোগও বলা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৪৪১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি গণবিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি ও অবস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : প্রলাপস ইউটেরাস কঠিন একটি নাম। অনেকেই হয়তো জানেন। আপনি কি বলবেন, সাধারণত এই রোগ কোন নামে পরিচিত? এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন?
উত্তর : আসলে গ্রামে সাধারণত লোকেরা রোগটিকে পদ্মরোগ হিসেবে জানে। রোগী এসেই বলে আমার পদ্মরোগ আছে। এই রোগে সাধারণত ইউটেরাসটি নিচের দিকে নেমে আসে। এর তিনটি পর্যায় আছে। প্রথম পর্যায় ভ্যাজাইনাল টয়টাসের মধ্যে থাকে। দ্বিতীয় পর্যায়ে হলে এটি থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। তৃতীয় পর্যায়ে একেবারে পুরো ইউটেরাসটি নেমে আসে।
প্রশ্ন : কারা বেশি এ সমস্যার মধ্যে পড়ে?
উত্তর : যেসব মায়ের অনেক বাচ্চা হয়েছে, তারাই মূলত এটার ভুক্তভোগী। আর আরেকটি হলো জরায়ুর মুখ না খোলার আগেই, অনেকে জোড় করে বাচ্চা বের করে ফেলছে। এ রকম বিষয়গুলোতে এমন হতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো অপুষ্টি। অপুষ্টির কারণেও প্রলাপস হতে পারে। আমাদের দেশের নারীরা প্রসব করার পরপরই সেডেন্ডারি কাজ বেশি করেন। সে জন্য তাঁদের চাপ বেশি পড়ে। শহরে কিন্তু প্রলাপস খুব বেশি দেখা যায় না। গ্রামাঞ্চলে খুব বেশি হয়। ঢাকায় কম দেখা যায়। কিন্তু সাভারে আমি যেখানে কাজ করি, সেখানে পেয়েছি। আমাদের কিছু ক্যাম্প আছে, সেখানে আসে।
প্রশ্ন : কী সমস্যা নিয়ে তারা আসছে?
উত্তর : আমার পদ্মরোগ আছে। জরায়ু নিচের দিকে নেমে গেছে। এটাই বলে। তখন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে কতটুকু নিচে নেমেছে। যদি মনে করি, তার ভ্যাজাইনার ভেতরেই আছে, তাহলে আর অস্ত্রোপচার করি না। তখন প্যালভিক ফ্লোর ব্যায়াম করতে বলি। আর যদি দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রলাপস হয়, আর যদি দেখি ভদ্রমহিলার বয়স ৩৫ বছরের ওপরে, তখন আমরা তাকে অস্ত্রোপচার করতে বলি। যদি দেখি তার পরিবার পূর্ণ, সে আর বাচ্চাকাচ্চা নেবে না, দেখি তার কি পায়খানা-প্রস্রাব করতে অসুবিধা হয়—এমন হলে তাকে অস্ত্রোপচার করে ফেলে দিই।
প্রশ্ন : জরায়ুর অস্ত্রোপচার করার প্রতি অনেকের অনাগ্রহ থাকে। তাদের তখন আপনারা আশ্বস্ত করেন কীভাবে?
উত্তর : আসলে আমরা তাদের পরামর্শ দিই। আপনি যদি এটা অস্ত্রোপচার না করান, ভবিষ্যতে আপনার সমস্যা বাড়বে। পায়খানা-প্রস্রাব করতে অসুবিধা হবে। আর একটি বড় সমস্যা হয় ঘন ঘন প্রস্রাব। আমাদের দেশের গ্রামের মুসলমান মেয়েরা হাঁচি-কাশি দিলে প্রস্রাব বের হয়ে আসে। তখন তাদের কাপড়চোপড় নষ্ট হয়ে যায়, নামাজ পড়তে পারে না। এভাবে কাপড়চোপড় ভিজে গেলে সামাজিকভাবেও একটি বাজে অবস্থা দাঁড়ায়। আর আরেকটি সমস্যা হয়, তৃতীয় পর্যায়ের প্রলাপসের সঙ্গে সঙ্গে তার ব্লাডার নেমে আসে। পায়খানার রাস্তা ও মূত্রথলি দুইটাই নেমে আসে। দুটো নেমে এলে প্রস্রাব করতেও তার অসুবিধা হয়, পায়খানা করতেও তার অসুবিধা হয়। এ কারণেই প্রধানত আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্য আসে।