ত্বকে ছুলি, দাউদ কেন হয়?

ত্বকে মাঝে মাঝে ফাঙ্গালজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪১৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. আহম্মেদ আলী। তিনি শহীদ সহোরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান এবং বর্তমানে মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : ফাঙ্গাস সম্বন্ধে কিছু তথ্য আপনার কাছে জানতে চাইব?
উত্তর : ফাঙ্গাস আসলে একটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের শব্দ। বাংলায় একে ছত্রাক বলে। ফাঙ্গাসজনিত রোগগুলোকে বাংলায় বলা যায় ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকজনিত চর্মরোগ বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়ে থাকে। এ সবই সাধারণত সবার কাছে পরিচিত। আমি একটু একটু করে যদি বলি, ছুলি বা ছোদ। এটি সাধারণত মুখে, গলায়, হাতে, শরীরে, বুকে, পিঠে খুব বেশি হয়ে থাকে। চিকচিক করে, সাদা সাদা বা একটু কালচে কালচে দেখা যায়। এটা অনেকের কাছে খুব পরিচিত। এটিও একটি ফাঙ্গাল ইনফেকশন। এটি আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি হয় এমন একটি রোগ এই ছোদ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম পিটেরোসিস ভার্সিকুলাস।
আমাদের দেশের আবহাওয়ার কারণে এটি সবচেয়ে বেশি হয়। গরমের সময় এর প্রবণতা আরো বেড়ে যায়। এই গরমের সময় সব ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন বেশি হয়, এটিও বেশি হয়।
প্রশ্ন : এই সময় হওয়ার কারণ কী?
উত্তর : এই গরমের সময় ঘাম খুব বেশি হয়। সব ধরনের ফাঙ্গাসই একটু স্যাঁত স্যাঁতে পরিবেশে তৈরি হয়। একটু স্যাঁত স্যাঁতে পরিবেশে মানুষকে আক্রান্ত করে। যেখানেই স্যাঁত স্যাঁতে পায় সেখানেই আক্রান্ত করার প্রবণতা থাকে। এটা নয় শুধু, অন্যান্য ফাঙ্গাল ইনফেকশনও স্যাঁত স্যাঁতে পরিবেশে বেশি হয়। সেই কারণে গরমের দিনে আমাদের ত্বকে যেহেতু তেল, ঘাম বেশি বের হয়, একটু পরিবেশটা এই রকম থাকে, এই কারণে এগুলো বেশি হয়।
দ্বিতীয় যে ফাঙ্গাল ইনফেকশন আছে, সাধারণ পরিচিত ভাষায় সেটি দাউদ নামে পরিচিত। একে দাদ বলে। এটি শরীরের ভেতরের অংশে বেশি হয়। যেখানে একটু স্যাঁত, স্যাঁতে থাকে, ভাঁজ থাকে এখানে হয়ে থাকে। তবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীরের সব জায়গায় হতে পারে। এটি খুব ছোট্ট একটি দানা আকারে শরীরে শুরু হয়। একটি নদীতে যদি আমরা ঢিল মারি তাহলে কী হয়? ঢেউ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। ঠিক ওই রকম চারদিকে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। চারপাশের সীমারেখাটা একটু উঁচু থাকে। মধ্যে একটু নিচু থাকে। এ রকম ছোট্ট একটি দানা থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। শরীরের যেখানই হোক, এভাবে শুরু হয়ে এটি বড় হতে থাকে। বড় হতে থাকলে এটি প্রচণ্ড চুলকায়। ছুলি কিন্তু অত চুলকায় না। তবে দাউদটা সেটি প্রচণ্ড চুলকায়। চুলকানির পর একটু কাঁচা রসের মতো বের হতে থাকে। ভেজা ভেজা থাকে। এটি যত দিন যায়, আরো বড় হতে থাকে। কষ্ট বাড়তে থাকে।
তৃতীয় আরেকটি ফাঙ্গাস জাতীয় চর্মরোগ আছে। সেটি আরো ভেজা জায়গাগুলোতে বেশি হয়। আপনি হয়তো খেয়াল করবেন, হয়তো দেখেছেন যারা বেশি হাত ভেজায় বা পানির কাজ করে, তাদের হয় অনেক সময়। হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা হয়। আবার যারা ঘামে বেশি, দীর্ঘ সময় ধরে জুতা, মুজা পরে থাকে, তাদের পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকেও হয়। এমন অনেকে আছেন যারা সকালে অফিসে যান। অনেক রাত করে ঘরে ফেরেন, জুতা, মুজা বেশি পরে থাকেন। তাদের অনেক সময় এই সমস্যা হয়। পায়ের ও হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে হয়। এ ছাড়া ছোট বাচ্চাদের গালেও এটা হয়। জিহ্বার ওপরে, গালেও অনেক সময় এটা হয়। ভেতরে অনেক ভেজা জায়গায় অনেক সময় হয়ে থাকে। এর নাম ক্যানডিডিয়েসিস বা ক্যানডিডাই ইনফেকশন। এটিও আরেকটি প্রচলিত রোগ। খুব বেশি হয় এটি। এই তিন ধরনের ছত্রাকজনিত চর্মরোগই সাধারণত আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।