শিশুর জন্মগতভাবে দাঁত উঠলে কী করবেন?

নিয়মিত শিশুদের দাঁতের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কেননা যত্ন না নিলে বিভিন্ন ধরনের দাঁতের সমস্যা হতে পারে। ১৬ জানুয়ারি এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৯৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. খালেদা আক্তার। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজারভেটিভ ডেন্টিসট্রি অ্যান্ড এন্ডোডেন্ট্রিকস বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
urgentPhoto
প্রশ্ন : শিশুদের দাঁত কখন ওঠা শুরু হয়? আর পড়া শুরু হয় কখন?
উত্তর : সাধারণত বইয়ে লেখা রয়েছে ছয় মাসে শিশুর দাঁত ওঠা শুরু হয়। তবে দেখা যায়, ছয় মাস থেকে এক বছর লেগে যায়। অনেক সময় বাবা-মা উদ্বিগ্ন থাকে যে ছয় মাস হয়ে যাচ্ছে, এরপরও শিশুর দাঁত উঠছে না। আমরা সাধারণত বলি এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। এতে চিন্তার কিছু নেই। আর দুধ-দাঁত তিন বছর পর্যন্ত উঠতে পারে। আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে দাঁত ওঠা শেষ হয়।
প্রশ্ন : দুধ-দাঁত যত্নের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর : এর যত্ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রথমে আমরা দাঁত দিয়ে কোনো খাবার খাই। খাওয়ার ওপর আমাদের সম্পূর্ণ পুষ্টি নির্ভর করে। আমাদের বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের বৃদ্ধি সবকিছুই এর ওপর নির্ভর করে। তাই দাঁতে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে শিশুটি খেতে পারে না। এ ছাড়া এই দাঁত কথা বলাতেও অনেক সাহায্য করে থাকে। এই দাঁতগুলো স্থায়ী দাঁতের জায়গা ব্যবস্থাপনা করে দিতে কাজ করে। এ ছাড়া গবেষণা করে দেখা গেছে, যেসব শিশুর দাঁত তাড়াতাড়ি পড়ে গেছে, তাদের বুদ্ধি, যাদের দাঁত পড়েনি তাদের চেয়ে কম।
এ ছাড়া দেখা যায়, বাচ্চাদের দাঁতের অসুখ বা দাঁত ব্যথা অসুস্থ হওয়ার কারণে সে স্কুলে যেতে পারছে না। সে মনোযোগ দিতে পারছে না। বিরক্ত থাকছে। এ জন্য অবশ্যই শিশুদের দাঁতের প্রতি যত্ন নিতে হবে।
কারণ, অভিভাবকদের মধ্যে একটি বিষয় কাজ করে যে দাঁতটি তো পড়েই যাবে। তাই দাঁতের যত্ন খুব বেশি প্রয়োজন নেই। এবং যখন দেখা যায় যে শিশুদের দাঁতে সমস্যা শুরু হয়েছে, তখন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করাতে চান না।
ছয় বছরে দীর্ঘস্থায়ী দাঁত শুরু হয়। তাই এই যে তিন বছর থেকে ১২ বছরেও দাঁতগুলো পড়ে যায়। তাই ছয় মাস থেকে ১২ বছর পর্যন্ত এসব দাঁতের অনেক যত্ন নিতে হবে। শূন্য থেকে দুই বছর পর্যন্ত বাবা- মা দাঁত পরিষ্কার করে দেবে। সাধারণত পাতলা গজকাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে রাখতে পারে। তখন থেকেই যত্ন শুরু করতে হবে। এ ছাড়া দাঁত ওঠার আগে জিহ্বা বা মাড়ি পরিষ্কার করে রাখা উচিত। আর দুই বছর পর আমরা সাধারণত দাঁত ব্রাশ করতে বলি। তখন ওরা কুলি করে পেস্ট ফেলে দিতে পারে। যখন থেকে কুলি করে পেস্ট ফেলে দিতে পারে, তখন থেকে আমরা ব্রাশ করতে বলি।
প্রশ্ন : শিশুদের দাঁতের কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : যেসব বাচ্চা বোতলে দুধ খায়, তাদের দাঁতে সমস্যা হতে পারে। সাধারণত দেখা যায়, তার সামনের সবগুলো দাঁতেই ক্ষয় হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে কালো কালো দাগ হয়ে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। যখন জিজ্ঞেস করা হয়, জানা যায় তারা রাতে বোতলে দুধ খায়। তাতে একটু চিনি মেশানো থাকে। অথবা জুস করা থাকে। সেটি পান করা অবস্থায় পরিষ্কার না করে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। আর যেহেতু মুখে কোনো কাজ হয় না বা লালা বের হয় না, ওগুলো জমে ব্যাকটেরিয়া হয়ে দাঁত ক্ষয় হয়।
এ ছাড়া শিশুদের মধ্যে যেটা দেখা যায় একটু বড় বয়সে চার থেকে ১০ বছর বয়সের বাচ্চারা চকলেট, চুইঙ্গাম এগুলো খেতে পছন্দ করে। কিন্তু খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা পরিষ্কার করে না। ওই খাবারগুলো ক্ষতি করে। তাদের দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। সাধারণত আমাদের দেশে দাঁতের ক্ষয়ই বেশি হয়।
প্রশ্ন : অনেক সময় শিশু জন্মগতভাবে দাঁত নিয়ে জন্মায়, সে ক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তর : অনেক সময় দেখা যায়, একটি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে একটি ছোট দাঁত নিয়ে। এটি যদি বাচ্চার স্তন পানে কোনো সমস্যা না করে তাহলে এটি রেখে দেওয়া যেতে পারে। আর যদি দেখা যায় সমস্যা হচ্ছে, তাহলে সেটি তুলে ফেলতে হবে। এই দাঁত তোলা খুব সোজা। এটি আলগাভাবেই লেগে থাকে। তবে বাচ্চাকে অবশ্যই ভিটামিন কে একটি ইনজেকশন দিয়ে এরপর ফেলতে হবে। এ নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এটি হতে পারে।
প্রশ্ন : বোতল ক্যারিজের ব্যবস্থাপনায় আপনারা কী করেন?
উত্তর : সাধারণত রোগটি কোন বয়সে কোন পর্যায়ে হয়েছে সেটি দেখে আমরা ব্যবস্থাপনা করে থাকি। যদি দেখা যায় যে, ক্ষয় বেশি হয়ে গেছে, বাচ্চার চার বছর হয়েছে, তখন আমরা লক্ষণ অনুসারে চিকিৎসায় চলে যাই। ব্যথার জন্য ব্যথার ওষুধ, হালকা কুসুম পানিতে কুলি করতে বলা হয়। বা কখনো কখনো অ্যান্টিবায়োটিক পর্যন্ত দিতে হয়। তখন আমরা আর চিকিৎসা করতে পারি না। আর যখন দেখা যায় পাঁচ ছয় বছর বয়স, ১২ বছর পর্যন্ত দাঁত রাখতে হবে, সামান্য ক্ষয়, তখন আমরা ফিলিং করে দিই। কিছু দাঁত আমরা রুট ক্যানেলও করে ফেলতে পারি। তবে দাঁত সংক্রমণ হলে অবশ্যই দন্ত্য বিশেষজ্ঞদের কাছে চলে আসা উচিত। কারণ ওই দাঁতের সংক্রমণ থেকে ভেতরে যে স্থায়ী টুথ জার্ম থাকে, সেটিও সংক্রমিত হতে পারে। পরে স্থায়ী দাঁত ঠিকমতো ওঠে না। তাই সব বাবা-মায়েরই উচিত শিশুদের দাঁতে সমস্যা হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া।
প্রশ্ন : শিশুদের দাঁতের যত্নে আর কী কী উপায় রয়েছে?
উত্তর : আসলে আমাদের দাঁত বা মুখ সবকিছুতেই মুখের স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলতে হবে। বাচ্চারা যেহেতু বিষয়গুলো জানে না, তাই বাবা-মাকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে সে ঠিকমতো দাঁত ব্রাশ করেছে কি না। বাবা-মা যখন যাবে শিশুদেরও দন্ত চিকিৎসকের কাছে তাদের রুটিন চেকআপ করতে হবে। যেন দাঁতের যত্নের বিষয়টিতে শিশুও সচেতন হয়।