মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা

আমাদের দেশে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ জন নারীর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাসিক আরম্ভ হয় না। আবার অনেক নারীর কখনো কখনো সামান্য রক্তস্রাবের মতো হতে পারে। কখনো কখনো প্রচুর স্রাবও হয়ে থাকে।
এসব নারী ও তাদের মা, খালা ও অন্যান্য আত্মীয় অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় থাকেন। চিকিৎসকরা মনে করেন এর প্রধান কারণ অসচেতনতা ও অজ্ঞতা। মাসিকের স্থায়িত্বকাল ও পরিমাণ প্রকৃতপক্ষে কত তা জানা নেই বলে এই চিন্তা আরো বেশি হয়।
মানসিক চাপ, গলগণ্ড রোগ, অপুষ্টি, যক্ষ্মা এবং অন্যান্য কারণেও প্রচুর পরিমাণ রক্তস্রাব ও দীর্ঘস্থায়ী স্রাব হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী স্রাবের আরো কারণ হলো জরায়ুর মুখে মাংস বেড়ে যাওয়া, যোনিপথে প্রদাহ, ডিমের থলিতে টিউমার। এ ছাড়া যদি রক্তের মধ্যে কোনো রোগ থাকে, যেমন হেফাইলিয়া, পারপুরা তাতেও অধিক পরিমাণ স্রাব হতে পারে।
মাসিকের সময়ে তলপেট ব্যথা
প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন নারী মাসিক আরম্ভ হওয়ার আগে বা চলাকালে তলপেটে, কোমরে বা উরুতে ব্যথা অনুভব করে থাকেন। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে যাদের মাসিক আরম্ভ হওয়ার দু-তিনদিন আগে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয়, এগুলো সাধারণত এন্ডোমেট্রিওসিস, পেলভিক অ্যাডিহিসন, জরায়ুতে যক্ষ্মার জন্য হতে পারে। এ ধরনের নারীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে। হরমোনের তারতম্যের কারণে তলপেটে ভার অনুভব করা, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, খাদ্যে অরুচি হওয়া, মাথা ব্যথা করা, খিটখিটে মেজাজ, শরীর ব্যথা এবং হাত-পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। এ জন্য চিকিৎসকের প্রয়োজন হয় না, চিকিৎসকের পরামর্শ ও উপদেশ গ্রহণেই তারা সুস্থ থাকতে পারে।
সাদা স্রাব
সাদা স্রাব মেয়েদের ক্ষেত্রে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এ জন্য মা ও মেয়ের কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই, কোনো প্রকার কারণ ছাড়াই সাদা স্রাব হতে পারে এবং মাসিক আরম্ভ হওয়ার দুই থেকে চারদিন আগে এর পরিমাণ একটু বেশি হতে পারে। পুষ্টিহীনতা, প্রদাহ, যৌনাঙ্গে যক্ষ্মা, অধিক যৌন উত্তেজনা, হস্তমৈথুন, যৌনকাজে অভ্যস্তের কারণে সাদা স্রাব হতে পারে। এমনকি জরায়ুর মুখে মাংসপেশি অথবা ঘা হলেও সাদা স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। শুধু চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সুফল লাভ করা যায়।
মেয়েদের তলপেটে ব্যথা
বেশির ভাগ মেয়ে তলপেট ও কোমরের ব্যথার কথা বলে থাকে। এটি একটি মানসিক অনুভূতি। তবে প্রচণ্ড ও অস্বাভাবিক ব্যথা হলে অবশ্যই এর কারণ নির্ণয় করে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব কারণে মারাত্মক ব্যথা হতে পারে সেগুলো হলো, অ্যাপেন্ডিসাইটিস ও ওভারিয়ান সিস্ট ডিমের ভেতর পানি জমে যাওয়া, হঠাৎ প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাসিকের রাস্তা বন্ধ হয়ে রক্ত জমে যাওয়া, ডিম্বনালি অথবা ডিম্বথলির ভেতরে গর্ভ হওয়া, সিস্ট ফেটে বা পেঁচিয়ে যাওয়া, জরায়ুর ভেতর টিউমার হওয়া এবং যোনি হারপিক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া।
এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছ থেকে দ্রুত পরামর্শ নিতে হবে, না হলে জীবনের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আমাদের দেশে যৌনবতী মেয়ের সংখ্যা প্রায় এক-চতুর্থাংশ। যেহেতু মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে, তাই তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষার প্রতি সচেতন হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
লেখক : অধ্যাপক ডা. সামছাদ জাহান শেলী, গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ, গাইনি বিভাগ, বারডেম।