ঢাবিতে শহীদ মিনারও হয়নি, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভও হয়নি

ভিত্তিপ্রস্তরের ৪৪ বছর পরেও নির্মাণ হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এতদিনেও তা না হওয়ায় শহীদ মিনার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত ওই স্থানে নির্মিত হবে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ।’
অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়নি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জানান, যেহেতু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর, সে কারণে নতুন করে শহীদ মিনারের কোনো প্রয়োজন নেই এখানে।
১৯৭২ সালে মল চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমেদ। এরপর ৪৪ বছর কেটে গেলেও নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়নি।
মল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, অযত্ন ও অবহেলায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের নামফলক প্রায় মুছেই গেছে। পাশেই শহীদ মিনারের অংশবিশেষও অবহেলায় পড়ে আছে।
২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিজানুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, ২০ জানুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের ইচ্ছানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়া হবে।
এই চিঠি পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি সভা করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ‘স্থান নির্বাচন’ কমিটি গঠন করে। ২৮ মার্চ স্থান নির্বাচন কমিটি সভা করে একটি সুপারিশ দেয়।
সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর এলাকায় যেখানে ১৯৭২ সালে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমেদ শহীদ মিনারের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন সেখানে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা যেতে পারে। পরে ৩১ মার্চ সুপারিশটি সিন্ডিকেট অনুমোদন দেয়। সার্বিক বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়ে ২৩ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়।
পরে স্মৃতিস্তম্ভের নকশার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নকশা করার জন্য ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ১৫ জানুয়ারি সেখান থেকে একটি নকশা ঠিক করা হয়। এই প্রতিযোগিতায় খরচ হয় পাঁচ লাখ টাকা। এরপর ৩০ জানুয়ারি কেমন খরচ পড়বে এই বিষয় জানতে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু বুয়েট থেকে কোনো উত্তর আজ পর্যন্ত আসেনি।
এ সব ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘এত বছর পরও যেহেতু শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি, তাই আমরা পরিকল্পনা করেছি ওই স্থানে মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে অবদান তাদের নিয়ে একটি ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ’ তৈরি করতে চাচ্ছি। এরই মধ্যে স্তম্ভের নকশা তৈরি হয়ে গেছে। কিছু দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সেহেতু আমরা নতুন করে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রয়োজন মনে করছি না।’