‘রঙ বিলাস’ আখ চাষে লাভবান চলনবিলের কৃষকরা

মনোমুগ্ধকর রঙ এবং রসে ভরপুর চিবিয়ে খাওয়ার বিশেষ জাতের আখ ‘রঙ বিলাস’ চাষ করে নাটোর জেলার কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে সফল হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে নাটোর জেলায় ১০৯ হেক্টর জমিতে এই বিশেষ আখ চাষ করা হয়েছে, যা থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০ টন রস পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই বছর মোট আবাদকৃত ১০৯ হেক্টর জমির মধ্যে সর্বোচ্চ ৬১ হেক্টর চাষ হয়েছে বড়াইগ্রাম উপজেলায়। এছাড়া গুরুদাসপুর উপজেলায় ৪৫ হেক্টর এবং সিংড়া উপজেলায় তিন হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ চলনবিল অধ্যুষিত এই তিনটি উপজেলাতেই ‘রঙ বিলাস’ আবাদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে, যা প্রমাণ করে চলনবিলের মাটি, পানি ও আবহাওয়া এই আখ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
বড়াইগ্রাম উপজেলার মহিষভাঙা গ্রামের ৩০ বছর ধরে এই আখ চাষে যুক্ত কৃষক গোলাম রসুল জানান, তিনি এ বছর তিন বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছেন এবং দুই বিঘার আখ বিক্রি করেছেন চার লাখ টাকায়। জমিতে প্রতি ১০০ আখ তিনি আড়াই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন, আর বাজারে এর খুচরা দাম ৩০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে জমি থেকেই আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
আখ চাষের আরেকটি লাভজনক দিক তুলে ধরেন কৃষক রবিউল করিম। তিনি জানান, আখের চারা রোপণের পর সাথী ফসল হিসেবে জমিতে রসুন বা পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। সাথী ফসল হিসেবে এক বিঘা জমিতে ২৫ থেকে ৩০ মণ রসুন অথবা প্রায় ৪০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যায়। সাথী ফসলের এই আয় দিয়ে আখের চাষের খরচ উঠে আসে, ফলে আখের বিক্রয়মূল্যের পুরোটাকেই মুনাফা হিসেবে ধরা যায়। এভাবে সাথী ফসল চাষের মাধ্যমে বিঘা প্রতি প্রায় দুই লাখ টাকা মুনাফা করা সম্ভব বলে কৃষকরা জানান।
বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ বলেন, ‘রঙ বিলাস’ আখ চাষের মাধ্যমে এই অঞ্চলের কৃষকদের আর্থিক অবস্থান সুসংহত হচ্ছে এবং কৃষি বিভাগ এই চাষের সম্প্রসারণে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
বনপাড়া কৃষি ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, শুধু রসুন বা পেঁয়াজ নয়, অনেক কৃষক এখন মুগ ডালও সাথী ফসল হিসেবে চাষের পরিকল্পনা করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘রঙ বিলাস’ আখ চাষ করে চলনবিল এলাকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন এবং অদূর ভবিষ্যতে চিবিয়ে খাওয়ার এই আখ এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসলে পরিণত হতে যাচ্ছে।