অসহায় রোগীদের জন্য চিকিৎসক দম্পতির ‘বিনামূল্যের ওষুধ কর্নার’

নাটোরের লালপুরে দন্ত চিকিৎসক দম্পতি ডা. তবিবুর রহমান তুশিন ও তার স্ত্রী ডা. সাবরিনা সিদ্দিকা চৈতি মানবতার অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছেন। চিকিৎসাকে তারা শুধু পেশা নয়, নিয়েছেন মানবসেবার মাধ্যম হিসেবে।
উপজেলার গোপালপুর বাজারে নিজস্ব চেম্বারে তারা গড়ে তুলেছেন অসহায় রোগীদের জন্য ‘বিনামূল্যের ওষুধ কর্নার’। দরিদ্র রোগীদের হাতে ওষুধ তুলে দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। শুধু তাই নয়, চেম্বারে সাধারণ ভিজিট (রোগী দেখার ফি) রাখা হয় মাত্র ২০০ টাকা। তবে যেসব রোগী আর্থিকভাবে অক্ষম, তাদের জন্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় পুরোপুরি বিনামূল্যে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোপালপুর বটতলা সংলগ্ন শিকদার ডেন্টাল পয়েন্টে চিকিৎসা নিতে এসেছে কয়েকজন। কেউ দাঁতের ব্যথায়, কেউ আবার সাধারণ অসুস্থতা নিয়ে এসেছেন। দরজার পাশে ছোট্ট একটি কাঁচের আলমারিতে সাজানো ওষুধ। এতে লেখা—গরিব ও অসহায় রোগীদের জন্য ফ্রি ওষুধ (বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত)। সেখান থেকে মরিয়ম নামে বয়স্ক এক বৃদ্ধা চিকিৎসা নেওয়ার পর হাতে কিছু ওষুধ পান একেবারে বিনামূল্যে। তিনি বলেন, স্বামী দিনমজুর, টাকা দিয়ে ওষুধ কেনা সম্ভব হয় না। এখানে ডাক্তার সাহেব নিজের ছেলের মতো দেখেন, আবার ফ্রি ওষুধ দেন।

শাহ আলম সেলিম নামে আরেকজন রোগী বলেন, টাকা না থাকলেও এখানে চিকিৎসা দেন ডাক্তার। যেখানে সরকারি হাসপাতালেই নিয়মিত ওষুধ পাওয়া যায় না। সেখানে বেসরকারি উদ্যোগে এমন কার্যক্রম শুধু চিকিৎসা নয়, মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এ বিষয়ে ডা. তবিবুর রহমান তুশিন বলেন, চিকিৎসা পেশায় আসার উদ্দেশ্যই ছিল মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাই ভিজিট সর্বনিম্ন রেখেছি। যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের আমরা বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছি। বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালসের ভিজিট থেকে প্রাপ্ত ওষুধ দিয়ে গরিব ও অসহায় রোগীদের জন্য কর্নার করেছি। সেখান থেকে বিনামূল্যে ওষুধ দিচ্ছি।

ডা. সাবরিনা সিদ্দিকী চৈতি বলেন, আমরা চাই, কেউ যেন টাকার অভাবে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয়। সবাই মিলে এমন ছোট ছোট উদ্যোগ নিলে একসময় বড় আকারে স্বাস্থ্যসেবায় ভূমিকা রাখা যাবে।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুনজুর রহমান বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এটি শুধু স্বাস্থ্যসেবা নয়, সমাজের প্রতি মানবিক দায়িত্ব পালনেরও অনন্য উদাহরণ। মানুষকে সেবার আলো পৌঁছে দেওয়ার যে প্রয়াস তারা নিয়েছেন, তা ভবিষ্যতে অন্যদের জন্যও প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।