চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনপ্রিয় হচ্ছে বারোমাসি কাটিমন আমের চাষ

আম বাগান পরিচর্যার উচ্চ খরচ এবং বছর শেষে প্রত্যাশিত লাভ না পাওয়ায় অনেক আম চাষি যখন মৌসুমী আমের বাগান কেটে ধান, গম, ভুট্টা বা কলার মতো অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছিলেন, ঠিক তখনই থাইল্যান্ডের বারোমাসি কাটিমন জাতের আম তাদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই জাতের টেকসই ও ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন আম চাষ করে এখন প্রতি বিঘা জমিতে বছরে প্রায় দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব হচ্ছে। গত ৫ বছরে এই লাভজনক আম চাষ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বারোমাসি কাটিমন জাতের আমের বাণিজ্যিক চাষ দ্রুত বাড়ছে। যেমন, গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, শুধুমাত্র এই উপজেলাতেই ৪৫৫ হেক্টর জমিতে বারোমাসি আম চাষ করা হয়েছে। এখান থেকে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৫ মেট্রিক টন।
ভোলাহাট উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এই উপজেলায় ৫৪০ হেক্টর জমিতে কাটিমন আম আবাদ হচ্ছে। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন।
জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের মেডিকেল মোড়ে গত তিন বছর আগে একটি বারোমাসি আমের বাজার গড়ে উঠেছে। এই বাজারে ৭-৮টি উপজেলার আমচাষীরা তাদের উৎপাদিত আম বিক্রি করতে আসেন। বোয়ালিয়া কাটিমন আম বাজারে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মণ আম ক্রয়-বিক্রয় হয়। যার দৈনিক বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা।
বর্তমানে কাটিমন আম মণ প্রতি ৫-৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, তবে এই দাম আরও বেড়ে ৮-৯ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আম বাজারে আড়তদার বা আম ক্রয়ের ঘরের সংখ্যা হলো ৫০টি।
আমচাষী দুলাল বলেন, আমরা মৌসুমী জাতের আম চাষ করে যে পরিমাণ টাকা খরচ করি, তা আম বিক্রি করে পাওয়া যায় না। কিন্তু বারোমাসি আম চাষে আমরা অধিক পরিমাণে লাভবান হচ্ছি।
আম আড়তদার নাইম জানান, আমরা দিনে প্রায় ১২ লাখ টাকার আম ক্রয় করি। এরপর তা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিক্রয়ের জন্য পাঠাই, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
ভোলাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সুলতান আলী বলেন, প্রায় ৫ বছর আগে থেকে বারোমাসি আম এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন কাটিমন জাতের আম চাষে অনেক আমচাষী উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাকলাইন হোসেন বলেন, বারোমাসি আমের চাষ পরিকল্পিতভাবে করতে হবে। আমের বৈচিত্র্য ধরে রাখতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের জাতের দিকে লক্ষ রেখে আম উৎপাদন করা জরুরি।