শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজও হয়নি জাতীয়করণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ভোলাহাট রামেশ্বর পাইলট মডেল ইনস্টিটিউশন’ এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলের মানুষকে শিক্ষার আলো দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়টি আজও সরকারি হয়নি, যা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি।
১৯১১ সালে ব্যবসায়ী রামেশ্বর দাস ভোলাহাট উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এটির নাম ছিল ‘ভোলাহাট রামেশ্বর হায়ার ইংলিশ স্কুল’। তৎকালীন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ছয় কক্ষবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ভবনটি আজও অক্ষত আছে। এটি বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে এটি ‘ভোলাহাট রামেশ্বর পাইলট মডেল ইনস্টিটিউশন’ নামে পরিচিত। ব্রিটিশ আমলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে বিদ্যালয়টিতে হিন্দু ও মুসলিম ছাত্রদের জন্য আলাদা দুটি হোস্টেল ছিল। সেখানে এখন আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে অসংখ্য মেধাবী ছাত্রছাত্রী দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বিশিষ্ট মঞ্চ ও টিভি নাট্যকার অধ্যাপক মরহুম মমতাজউদদীন আহমেদ এই স্কুলের গর্ব। শিল্পপতি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ বিমানের চিফ ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার মোজাফ্ফর হোসেনসহ অনেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম অর্জন করেছেন। এছাড়া বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদদীন আহমদ ১৯৫২ থেকে ৫৩ সালে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে মোট ২৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ৯ জনই এ প্রতিষ্ঠানের সাবেক ছাত্র। স্কুলটিতে প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সাল থেকে এখানে ভোকেশনাল শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কোরবান আলী অভিযোগ করে বলেন, জাতীয়করণের তালিকায় প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের সময় অনৈতিকভাবে তাদের ফাইল সরিয়ে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের ফাইল যুক্ত করা হয়। ফলে এত পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে যায় এবং অন্য একটি জুনিয়র স্কুল সরকারি হয়ে যায়।
এ বিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলটি আগেই জাতীয়করণ করা উচিত ছিল। যেহেতু জেলা প্রশাসকও এই বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তাই সবাই মিলে চেষ্টা করলে স্কুলটি দ্রুত জাতীয়করণ হবে।