মার্কা না দিলে মানি না, এটা ঠিক না : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি

বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে নানা পরামর্শ এবং মতামত দিয়েছেন। কেউ অতীতের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়েছেন। কেউ জাতির ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সামনে এগিয়ে যেতে বলেছেন। কেউ আবার বর্তমান বাস্তবতার কথা বলেন। সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ইঙ্গিত করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বলেন, ‘মার্কা না দিলে মানি না, এটা ঠিক না। ইসি স্বাধীন। এ বিষয়ে চাপ দেওয়া উচিত না।’
আজ রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত সংলাপে এ পরামর্শ দেন ভিসি ইয়াহিয়া আখতার।
মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বলেন, ‘যে মার্কা দেবে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন। মার্কা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা উচিত না। রাষ্ট্র মেরামতের যে অপূর্ব সুযোগ ছাত্ররা এনেছেন, এই পরিস্থিতিতে যদি স্থানীয় নির্বাচন আগে করেন, তাহলে একটা বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। তাই সংসদ নির্বাচনটাই অবিতর্কিতভাবে সম্পন্ন করা উচিত।’
ইয়াহিয়া আখতার বলেন, ‘আগেও ভালো বক্তব্য দিয়েছিলাম, আমলে নেওয়া হয়নি। কাজেই আমি কীভাবে বিশ্বাস করব, ভালো আলোচনা করব আর আপনারা তা আমলে নেবেন? আমলে নিলে ভালো। এমন একটা পরিস্থিতিতে নির্বাচন করতে চাইছেন, সেটা ভয়াবহ পরিস্থিতি। গত ২০ বছরের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই দিকটা লক্ষ্য রেখে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারেন, ইতিহাসের পাতায় আপনাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশে ভোট হলে সারা পৃথিবী নতুন নতুন জিনিস পায়। এজন্য তারা আগ্রহভরে পর্যবেক্ষণ করে। একবার বলা হলো রাতের ভোট হয়েছে—তারা নতুন কিছু পেলেন। আরেকবার বললেন—১৫১ হলে যেখানে সরকার গঠন করা যায়, সেখানে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়ে গেল। তাই ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা বাংলাদেশ থেকে নতুন কিছু পান। তবে আমি বলব, এমন কিছু করুন যাতে তারা ইতিবাচক কিছু পান।’
ইয়াহিয়া আখতার আরও বলেন, ‘আগের কমিশনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এবং বলা হতো—নির্বাচনে অংশ নেব না। তবে বর্তমান কমিশনকে এমন কিছু কেউ বলছেন না। ইসি আমলাদের দিয়ে আগে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করেছে—আমরা অতীতে দেখেছি। বর্তমান সরকার তেমন নয়। পোস্টাল ব্যালটে ভোট নিয়ে সতর্ক হতে হবে। আচরণবিধি প্রতিপালনে যদি শক্ত অবস্থান নেন, তাহলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হতে পারে। সরকার পরিবর্তন হলেও আমলাতন্ত্র পরিবর্তন হয়নি। ইসির যথেষ্ট লোকবল আছে। তাই আপনাদের প্রশিক্ষিত লোকবল থাকলেও আমলাদের নিয়োগ করা হয়। কাজেই আপনাদের দক্ষ লোকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করুন। এখন ডিসিদের দেওয়া হয়। তারা সারা বছর এ নিয়ে কাজ করে না। তবে ইসির কর্মকর্তাদের সেই অভিজ্ঞতা আছে।’
ভিসি ইয়াহিয়া আখতার বলেন, ‘কোনো নতুন সিস্টেম চালু করতে হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত। পিআর নতুন জিনিস। চালু করতে চাইলে অনেক ভেবে চিন্তে এটা করতে হবে। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ তো এটা জানেন না। এজন্য যে জ্ঞান-গরিমা দরকার, সেটা তো নেই। কাজেই এ সিস্টেম চালুর আগে অনেক চিন্তাভাবনা করে এগোবেন।’
আজ সংলাপে সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে পরিণতি কী হয়, সে কথা প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারদের মনে করিয়ে দিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীরা। এ সময় তারা নাসির কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাহস দেখানোর পরামর্শ দিয়ে প্রয়োজন হলে পদত্যাগের পরামর্শও দেন।