শুধু ডিগ্রি নয়, কাজের ভিত্তিতে মর্যাদা নির্ধারণ করা হবে : জামায়াত আমির

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যদি জনগণের সমর্থনে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায় তাহলে দলটি তিনটি প্রধান বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘ভাঙাচোরা শিক্ষাব্যবস্থা মেরামত করা হবে, ডিগ্রি নয় যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্ম নিশ্চিত করা হবে এবং দুর্নীতি কমাতে সেবার গুরুত্ব ও গভীরতার ভিত্তিতে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হবে।’
আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ ভবনে ফোরাম অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (এফডিইবি) বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন জামায়াত আমির।
ন্যায়বিচার ও সুশাসনের ওপর জোর দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এলে দাবি আদায়ে কাউকে এক মিনিটের জন্যও কর্মস্থল ফেলে রাস্তায় আসতে হবে না। ইনসাফের ভিত্তিতে যার যেটা পাওনা সেটা তার হাতে তুলে দেওয়া হবে।’
প্রথম অঙ্গীকার হিসেবে জামায়াত আমির দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘ভাঙাচোরা’ আখ্যা দিয়ে এটিকে দেশের ‘মেরুদণ্ড’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভাঙাচোরা শিক্ষাব্যবস্থা আর রাখা হবে না। এমন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হবে, যা মানুষকে কেবল জ্ঞান নয়, নৈতিকতা শেখাবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘যে শিক্ষা মানুষকে অনৈতিক করে, দুর্নীতিগ্রস্ত করে, ইতর প্রাণীতে পরিণত করে, সেই শিক্ষা দেবো না। যে শিক্ষা মানুষকে মানুষ বানায়, প্রত্যেক মানুষকে সম্মান দিতে শেখায়, মর্যাদা দিতে শেখায়; আমরা সেই শিক্ষা দেবো। এই শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক ও বৈষয়িক শিক্ষার সম্মিলনে ছেলে বা মেয়ে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবে।’
দ্বিতীয় অঙ্গীকার হিসেবে জামায়াত আমির সমাজে মানুষের মর্যাদা নির্ধারণের মানদণ্ড পরিবর্তনের ঘোষণা দেন। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘শুধু ডিগ্রির ভিত্তিতে এই কল্যাণ রাষ্ট্রে কারও মর্যাদা নির্ধারণ হবে না। কাজের ভিত্তিতে মর্যাদা নির্ধারণ করা হবে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘কোনো যুবক-যুবতি কাজের বাইরে থাকবে না। কাজ যেটাই হোক সে কাজে থাকবে। হয় উদ্যোক্তা নয়তো চাকরিজীবী। যারাই সমাজে উজাড় করে দেবে তারাই সম্মানিত হবে। তাদের দেখে সবাই উদ্যোগী ও উদ্যমী হবো।’
তৃতীয় অঙ্গীকার হিসেবে জামায়াত আমির দুর্নীতিকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দেশে দুর্নীতির জোয়ার থামিয়ে দেওয়া হবে। এতে অনেকের অস্বস্তি তৈরি হবে, তবে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতি দমন জরুরি।’
একইসঙ্গে প্রতিটি সেবার গুরুত্ব ও গভীরতার ভিত্তিতে বেতন কাঠামো নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি দেন ডা. শফিকুর রহমান।
জামায়াত আমির বলেন, ‘জনগণের আস্থা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হলে আর কাউকে বঞ্চিত হতে হবে না। ইনসাফের মাধ্যমে প্রত্যেকেই তার প্রাপ্য অধিকার পাবে।’
জামায়াতে ইসলামীর আমির আরও বলেন, ‘আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আল্লাহর দেওয়া হাত দিয়ে আমরা কারও হক নষ্ট করব না, কারও সম্পদের ওপর অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করব না। সূর্য তো একটাই, কিন্তু সে তো শুধু দুনিয়া নয়, প্রত্যেকটা উপগ্রহকে আলোকিত করে রাখে। আমাদের একেকটা সূর্য হয়ে আলো ছড়াতে হবে, দেশকে আলোকিত করতে হবে।’
পুলিশের উদাহরণ দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “পুলিশের ২৪ ঘণ্টা ডিউটি। কখন ডাক পড়ে ঠিক নেই। অস্ত্র হাতে থাকলেও তাকে ঝুঁকি নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হয়। কারণ প্রতিপক্ষের কাছেও অস্ত্র আছে। কিন্তু তাকে যদি ফকিরের ভিক্ষার মতো বেতন দেওয়া হয়, সে ঝুঁকি নেবে কেন? যে কারণে সমাজের আজকের এ অবস্থা। তাকে তার কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক বা বেতন দেওয়া উচিত। অথচ আমাদের এখানে ‘বেড়ায় সব ধান খেয়ে ফেলছে’ অবস্থা।”