বাংলাদেশের বাস্তবতায় কাজ করা কঠিন : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কাজ করা খুবই ডিফিকাল্ট (কঠিন)। পার্টিকুলারলি যেই অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশ যাচ্ছে, তাতে কাজ আদায় করে নেওয়া কঠিন। কিছু কিছু পক্ষের লোকের জন্য খুব সুবিধা, আর বেশিরভাগ পক্ষের লোকের জন্য ডিফিকাল্ট। এই সিচুয়েশনে আমরা এখন এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি।’
আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠানে নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন এ এম এম নাসির উদ্দিন।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ‘আপনারা ওয়াদা করেছিলেন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন এবং প্রফেশনালি কাজ করবেন। আইন মেনে কাজ করবেন।’
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা ইলেকশনের জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি এবং বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করছি। এতে আমরা অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আমি চাই কোনো দলের পক্ষে হয়ে কেউ কাজ করবেন না। এটা আমরা প্রত্যাশা করি না এবং আপনারা আজকে ওয়াদা করলেন—যেকোনো ব্যক্তি বা পক্ষের পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে আপনারা কোনো কাজ করবেন না।’
নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সিইসি আরও বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ আইন ও বিধি মোতাবেক, সঠিক কাজটি সঠিকভাবে করার নির্দেশনা দেবো। কাজটা সঠিকভাবে আপনারা করছেন এবং সেটা যে আপনারা সঠিকভাবে করছেন, তা আমরা নিশ্চিত করব।’
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সিভিল সারভেন্ট ইজ এ পলিটিক্যাল পারসন। হি মাস্ট বি পলিটিক্যাল। বাট হি অর শি শুড বি নন পার্টিশন। আপনি কোনো দল করতে পারবেন না, কিন্তু ভোটটা একজনকে দেবেন।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এই নির্বাচন একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সুতরাং, আমাদের বিশেষভাবেই এটা মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষভাবেই এইটা ফেস করতে হবে, বিশেষ অ্যারেঞ্জমেন্টের মাধ্যমেই এটাকে আমদের এগিয়ে নিতে হবে।’
‘আগামী নির্বাচন ঐতিহাসিক হবে’ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘অতীতে যা-ই করে থাকুন, আমাদের প্রমাণ করতে হবে আমরা এটা পারি। এর কোনো ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ নেই। আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আমি এটা নিশ্চিত করব।’
একই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং জাতি হিসেবে এই মুহূর্তে একটা সময়ের ক্রস রোডে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা এই যে অবস্থায় আছি, এর সম্ভবত এক নম্বর কারণ নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়া।
ইসি সানাউল্লাহ আরও বলেন, ‘আপনারা একবার চোখ বন্ধ করে চিন্তা করেন, ভালো নির্বাচন হলে কি এ ধরনের ঘটনা ঘটত? আমরা এ ধরনের নির্বাচন করব না, নির্বাচনের অংশ হব না। এই নির্বাচন কমিশন কখনোই আপনাদের পক্ষপাতদুষ্ট কোনো নির্বাচনের নির্দেশনা দেবে।’
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো চাপ কোনো ইনসট্রাকশন কোনো ধরনের ইনিয়ে বিনিয়ে কিছু বলা হবে না। আইন অনুযায়ী সুষ্ঠ নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। স্বচ্ছ নির্বাচন হতেই হবে।’
ইসি আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে, নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে অনেক অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন ভালো নির্বাচন করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই।’
বিগত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদাহরণ টেনে ইসি তাহমিদা আহমদ বলেন, ‘বিগত দিনে যেটা হয়েছে, আমরা দেখেছি, আপনারা দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। আপনাদের অবস্থা ছিল হৈমন্তী শুক্লার গানের মতো ‘আমার করার কিছুই ছিল, না চেয়ে চেয়ে দেখলাম’ এর মতো, কিন্তু এবার হবে উল্টো। মানে চেয়ে চেয়ে দেখার আর সময় থাকবে না। আপনারা খালি কাজ করতেই থাকবেন। তবে এটাও ঠিক, আমরা সবাই কি চেয়ে দেখেছিলাম? আমরা কেউ কেউ তো আবার একটু বেশি উৎসাহী হচ্ছিলাম।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, ‘অতীতের যেকোনো নির্বাচনের থেকে আসন্ন নির্বাচন চ্যালেঞ্জের। আমরা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে চাই।’
আখতার আহমেদ বলেন, ‘ইসির চ্যালেঞ্জ দুটি। একটি হলো এআইয়ের অপপ্রয়োগ, আরেকটি প্রবাসীদের ভোটাধিকার। আমরা প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করব। ধাপে ধাপে কাজ করছি, ওভারনাইট কিছু হবে না। আমরা কাজ করে সব কিছু আদায় করতে চাই। ভালো নির্বাচনের বিকল্প নেই, এটির জন্য জাতি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোনো কৃপণতা নেই। আমরা চেষ্টা করছি সব কাজ ভালোভাবে করতে।’
নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার এবং পোস্টাল ভোটিংয়ের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সুন্দর নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে বলেও জানান ইসি সচিব।