ইসির নিবন্ধন পেতে পারে এনসিপিসহ ৬ দল

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চূড়ান্ত নিবন্ধন পেতে পারে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ছয়টি রাজনৈতিক দল। ইসির একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। যদিও সূত্রমতে নিবন্ধন পেতে যাওয়া চারটি দলের নাম জানা গেলেও দুটির জানা যায়নি।
আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এসব দলের নিবন্ধন আবেদন অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে ফাইল পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানায়, ইসি আজ সোমবার সকালে এ ব্যাপারে আলোচনা করেছে এবং সিদ্ধান্তও নিয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, কমিশনের কাছে নথি পাঠানো হয়েছে। কমিশন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে আমাদের জানাবেন। তারপর গণমাধ্যমে বিষয়টি জানানো হবে৷
একজন নির্বাচন কমিশনার নাম প্রকাশ না করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে সচিবালয় থেকে জানানো হবে। আদালতের মাধ্যমে একটি আর বোধহয় অন্য পাঁচটি দল ইসির নিবন্ধন পাবে। এর বাইরে কয়েকটি দলের ব্যাপারে পুনঃতদন্ত করা হবে।
গত ২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি ফয়সাল হাসান আরিফের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিকে ৩০ দিনের মধ্যে নিবন্ধন দিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন আদালত।
সূত্র জানায়, ২২টি দলের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাই শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগসহ ছয়টি দলকে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন দিতে নথি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শাখার কার্যক্রম শেষ হয়েছে রোববার।
ওই সূত্র আরও জানায়, ছয়টি দলের নিবন্ধনের জন্য কমিশনের কাছে ফাইল পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ছয়টি দলের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। আর বাকি ১০টি দলের বিষয়ে পুনঃতদন্ত করা হবে। এ ১০টি দলের মধ্যে ৯টির মাঠ পর্যায়ে পুনঃতদন্ত এবং একটি দলের পুনঃতদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে নির্বাচন কমিশনের এক জেষ্ঠ কর্মকর্তাকে।
এর আগে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব আলী নেওয়াজ গত ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর দুটি দল ছাড়া ২০টি দলের শুনানি করেন। অন্যান্যবারের মতো এবারও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এতে ১৪৩টি নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছিল। প্রথম দফায় কোনো দলই শর্ত পূরণ না করায় সবাইকেই সময় দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে বলেছিল ইসি। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ৮৪টি দল সাড়া দিলেও অন্যরা সাড়া দেয়নি। ৮৪টি দলের মধ্যে আবার ৬২টি দল ঘাটতি পূরণ করতে তথ্য জমা দিয়েও শর্তপূরণ করতে পারেনি। তাই বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ২২টি দলের মাঠ পর্যায়ে তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শুনানি করে ইসি।
যে ২২টি দলের মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করা হয়—
ফরোয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড ডেভোলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পাটি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি ও নতুন বাংলাদেশ পার্টি।
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয় জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এ ছাড়া কোনো দলের কেউ আগে সংসদ সদস্য থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরে থাকে ইসি। এ প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়মকানুন মেনে আবেদন করতে হয়।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর কমিশন প্রথমে এগুলো প্রাথমিক বাছাই করে। এরপর প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ দলগুলোর তথ্যাবলি সরেজমিন তদন্ত শেষে বাছাই সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীতে মনোনীত দলগুলোর বিরুদ্ধে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে দাবি-আপত্তি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেখানে কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করে কমিশন। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করে সংস্থাটি। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দিতে পারে না।
বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি (আওয়ামী লীগসহ)। এবার আরও ছয়টি দল নিবন্ধন পেলে ইসির নিবন্ধিত মোট দলের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৭টি। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি।