বিকেলে ভ্যান চোর ছেড়ে দিল পুলিশ, সকালে চোরের বাড়ি ঘেরাও জনতার

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভ্যানসহ তিন চোরকে ধরে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পরে ভ্যান চুরির একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এক চোরের বাড়ি প্রায় তিনঘণ্টা ঘিরে রাখেন কয়েক শত ভ্যানচালক ও তাদের স্বজনরা।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের বহলবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চোরদের বাড়ি ঘিরে রাখেন তারা। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের মাদুলিয়া ব্রিজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত তিন চোরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
অভিযুক্ত চোরেরা হলেন উপজেলা যদুবয়রা ইউনিয়নের বহলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা রিদয় হোসেন (১৮), আসাদুল ইসলাম (১৯) ও রাকিবুল ইসলাম (২০)। তাদের মধ্যে আসাদুলের বাড়ি ভ্যানচালক ও তাদের স্বজনরা ঘিরে রাখেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য, এ উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় প্রতিনিয়ত ভ্যান চুরির ঘটনা ঘটছে। থানায় অভিযোগ দিয়েও চোর ও ভ্যানের সন্ধান মিলছে না। ফেসবুকে চোরের ভিডিও দেখে চুরি যাওয়া ভ্যান ফিরে পেতে চালক ও স্বজনরা ভিড় জমান এবং আসাদুলের বাড়ি ঘিরে রাখেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার পান্টি এলাকা থেকে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান চুরি করে রিদয়, আসাদুল ও রাকিব। সেসময় টের পেয়ে স্থানীয়রা অপর একটি ভ্যান নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে চাপড়া ইউনিয়নের মাদুলিয়া ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে ভ্যানসহ অভিযুক্তদের আটক করে উত্তম মাধ্যম (গণধোলাই) দেন জনতা। পরে বাঁধবাজার পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মোহাম্মদ আলী ও সঙ্গীয় ফোর্সের কাছে ভ্যানসহ হস্তান্তর করেন বিক্ষিপ্ত জনতা। পরে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে চোরদের ছেড়ে দেয়।
আরও জানা গেছে, ধাওয়া করে চোর ধরা এবং চোরদের মারধরের ঘটনা মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। আর বুধবার সকাল থেকে অভিযুক্ত আসাদুলের বাড়িতে কয়েক শত ভ্যানচালক ও তাদের স্বজনরা ভিড় করেন। এ সময় আসাদুলের বাড়ি থেকে দুটি গরু নিয়ে পরে ফেরত দেন তারা। এই সব ভিডিও মুহূর্তেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সকাল ১০টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, অভিযুক্ত আসাদুলের বাড়িতে শত শত উত্তেজিত মানুষ। আসাদুলকে না পেয়ে তার বাবা সালামকে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে, ‘তোরা ভ্যান চোর। সবার ভ্যান নিছিস। তাড়াতাড়ি ফেরত দে।’
সকাল ১০টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বহলবাড়িয়া সড়কে উৎসুক ভ্যানচালক ও জনতা। তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।
এ সময় যদুবয়রা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, চুরি যাওয়া ভ্যান ফিরে পেতে চোরের বাড়িতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন জড়ো হয়েছে। তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভ্যানচালক বলেন, ফেসবুকে ভিডিও দেখে পান্টি থেকে এসেছি। গত শুক্রবার আমার ভ্যান চুরি হয়েছে। এই গ্রুপই চুরি করেছে। তার ভাষ্য, প্রতিদিনই প্রায় ভ্যান চুরি হচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ দিলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না।
এ সময় আসাদুলের মা বলেন, ‘এতোদিন বুঝিনি। এবার টের পেয়েছি ছেলে চুরি করেছে। কাল (মঙ্গলবার) থেকে ছেলে বাড়ি ফেরেনি। আর সকাল থেকে শত শত লোক এসে ডিস্টার্ব করছে। কেউ বেড়ায় বাড়ি মারছে। কেউ গরু খুলে নিয়ে যাচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় চৌরঙ্গী বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, অভিযুক্ত তিন পরিবারের সদস্যরাই চোর। এদের বিচার হওয়া উচিৎ।
অভিযোগ অস্বীকার করে বাঁধবাজার পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মোহাম্মদ আলী ফোনে বলেন, জনগণ ভ্যানসহ তিন চোর ধরে পুলিশে খবর দিয়েছিল। কিন্তু কেউ বাদী না হওয়ায় স্থানীয় মোতাহার মেম্বারের কাছে জিম্মায় দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর সদস্য মোতাহার হোসেন ফোনে বলেন, আমি অসুস্থ। পুলিশ আমাকে কিছু বুঝে দেয়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি সবাই চলে গেছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, চুরি যাওয়া ভ্যান পেতে অনেকেই সকালে এক চোরের বাড়িতে ভিড় করেছিল। ফেসবুকে ভিডিও দেখে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে পুলিশ চোর ধরে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি কেউ জানায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।