তিস্তায় পানি কমলেও দুর্ভোগ বেড়েছে স্থানীয়দের
লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে টানা চার দিন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর আজ সকাল থেকে পানি নিচে নেমে এসেছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও স্থানীয়দের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। তিস্তাপাড়ের নিচু এলাকাগুলো এখনো প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে, যার কারণে পানিবন্দি মানুষের দুর্দশা অব্যাহত আছে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ২টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯২ মিটার, যা বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচে।
তিস্তাপাড়ের মানুষ ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, চার দিনের ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সোমবার (১১ আগস্ট) রাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে তা টানা তিন দিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বাড়ার ফলে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার বেশ কিছু এলাকা বন্যার কবলে পড়েছে। নদীর দুই পাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নতুন নতুন এলাকা ডুবে গেছে; পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম; হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্দ্ধন, বাহাদুরপাড়া; সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
টানা চার দিনের বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলো আগে থেকেই রয়েছে চরম দুর্ভোগের মধ্যে। এখন পানি কমতে থাকলেও শুরু হয়েছে নতুন উপদ্রব। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ হানা দিচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকায়।
এদিকে, গবাদিপশু, বৃদ্ধ, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিপাকে রয়েছেন লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের মানুষ। চারপাশে শুধু পানি। বাড়ির ভেতরে বিছানার ওপর মাচা বানিয়ে গৃহিণীরা দিনে একবার রান্না করছেন, কেউ কেউ উঁচু রাস্তা বা বাঁধে চুলা বসিয়ে রান্না করছেন। বাঁধ ও রাস্তার ধারে পলিথিনের তাঁবু টাঙিয়ে রাখা হচ্ছে গবাদিপশুগুলোকে। সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনায় পড়েছেন বৃদ্ধরা।

গোবর্দ্ধন গ্রামের ফরিদ মিয়া বলেন, চারদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছি। উজানের ঢলে তিস্তা গর্জে উঠেছে, ভয়ংকর রূপ নিয়েছে নদী। নির্ঘুম রাত কাটছে বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর।
হাতীবান্ধা গড্ডিমারী গ্রামের সালমা বেগম বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। আমাদের গ্রামের সব বাড়িতে হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানি। রান্না, খাওয়া, থাকা, শৌচকর্ম— সবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। রাতে ঘুমাতে পারছি না। বাচ্চাদের নিয়ে আতঙ্কে থাকি, কখন কে পানিতে পড়ে যায়!
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়ছে। গত চার দিন ধরে পানি বাড়তে থাকায় তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও পরিস্থিতির উন্নতি হতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে কিছু শুকনো খাবার ও জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই কাজ চলমান রয়েছে। আরও শুকনো খাবারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।