জনশূন্য টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবের সমাধিতে কঠোর নিরাপত্তা, পালিত হয়নি মৃত্যুবার্ষিকী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে কোন কর্মসূচি পালন করা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে টুঙ্গিপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আজ শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকাল থেকে আইনশৃখলা বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরো কড়াকড়ি আরোপ করে।
বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের ভিতরে ও বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেওয়ায় সমাধিসৌধের ভিতরে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন। কোন দলীয় নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে কোনো কর্মসূচি পালন করা হয়নি। সাধারণ মানুষকেও আসতে দেখা যায়নি। টুঙ্গিপাড়ার রাস্তা-ঘাট ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। এলাকা ছিল নিরব-নিস্তব্ধ।
শুধু টুঙ্গিপাড়া সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে নয় গোপালগঞ্জ জেলা সদরসহ গোটা জেলাতেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা জুড়ে পুলিশ এপিবিএনসহ দেড় সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।
জেলার স্পর্শকাতর স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে টহল দিতে দেখা গেছে। জেলায় যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গওহরডাঙ্গা চৌরঙ্গী মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড, কলেজ সড়ক, বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ সড়ক, বাইপাস সড়কসহ শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে প্রবেশের স্থানগুলোতে এপিবিএনের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধির মূল প্রবেশদ্বারসহ বাকি দুটি প্রবেশদ্বারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তবে সমাধির ৩ নং গেটের পাশে কিছু দোকানপাট খোলা দেখা যায়।
আগে এই দিনটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে হাজার হাজার মানুষের জনসমাগম হতো। আর দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন রীতিমতো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই দিনটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন। কিন্তু এ বছরের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কিছুদিন পর থেকেই হাজার হাজার লোকের জনসমাগমস্থান বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল নীরবে নিভৃতে চলে যায়। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আগস্ট মাসজুড়ে শোকের মাস হিসেবে কর্মসূচি পালন ও শোক দিবসের কাঙালি ভোজ আর শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রতিযোগিতা আর দেখা যাচ্ছে না। পর্যটকদেরও আনাগোনা নেই। আওয়ামী লীগের আমলে প্রশাসনের কোন কর্মকর্তার পদোন্নতি হলেই চলে আসতেন শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা জানাতে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হতো। এই দিনটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, তবারক, শোকসভা ও দোয়া-মিলাদ ছিল নিয়মিত আয়োজনের অংশ। কিন্তু এবার টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধের তিনটি প্রবেশদ্বারই বন্ধ রাখা হয়েছে। আগের মতো সমাধিকে ঘিরে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক আয়োজন নেই।
সরেজমিনে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, ১৫ আগস্টকে ঘিরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে টুঙ্গিপাড়ায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। সেনাবাহিনী, এপিবিএন ও পুলিশের পাশাপাশি নজরদারি বাড়িয়েছে গোয়েন্দারা। গওহরডাঙ্গা চৌরঙ্গী মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড, কলেজ সড়ক, বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ সড়ক, বাইপাস সড়কসহ বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রবেশের স্থানগুলোতে এপিবিএনের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের পুরো এলাকা রয়েছে সম্পূর্ণ নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রতি বছর জাতীয় ও স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে নানা কর্মসূচি হতো। এবার শুধুই নীরব শোক। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে কেউ হয়তো শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আসার সাহস পাচ্ছে না। তবে শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে সকল রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত।
না প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, আগে আমাদের ভালো বেচাকেনা হতো। কারণ শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ব্যাপক জনসমাগম হতো এই দিনে। কিন্তু সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পলাতক আর কঠোর নিরাপত্তার কারণে এখন তেমন কেউ সমাধিতে আসে না। তবুও দোকান খুলে বসে আছি।
টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদ আলম বলেন, টুঙ্গিপাড়াজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটেনি। টুঙ্গিপাড়ার কোথাও শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের খবর পাওয়া যায়নি।