শহীদ ইসমামুল হকের ময়নাতদন্ত করেনি ডাক্তার, সাক্ষ্য বড় ভাইয়ের

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর চানখারপুলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যদের গুলিতে শিক্ষার্থীসহ ছয়জনকে হত্যা মামলায় আদালতে তৃতীয় দিনের সাক্ষীতে শহীদ ইসমামুল হকের ভাই মো. মহিবুল হক তার হত্যাকাণ্ডের বীভৎস বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুলে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল ইসমামুল হক। এরপর ৭ আগস্ট অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেদিন বিকেল ৪টার দিকে সে ইন্তেকাল করে। তার ময়নাতদন্ত হয়নি। কারণ ডাক্তাররা ময়নাতদন্ত করেনি। পরে আমরা ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে ইসমামুলের লাশ নিয়ে চট্টগ্রামের নিজ বাড়িতে যাই।
আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এ মামলাটিতে সাক্ষ্য প্রদানকালে শহীদ ইসমামুল হকের বড় ভাই মহিবুল হক এসব কথা বলেন।
জবানবন্দিতে শহীদ ইসমামুল হকের বড় ভাই বলেন, আমার নাম মো. মহিবুল হক। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ২১ বছর। ৫ আগস্ট ২০২৪ এর ঘটনা। তখন আমি চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে ছিলাম। সেদিন আমার ভাই ইসমামুল হক (১৭) ঢাকা চানখারপুলে শহীদ হয়েছে। বেলা আনুমানিক ১টার দিকে আমার ভাই শহীদ ইসমামুলের মোবাইলফোন থেকে জনৈক ব্যক্তি আমাকে কল করে জানায়, আমার ভাই পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি আছে। ইসমামুল চকবাজার গফুর সওদাগরের দোকানে কাজ করত। আমি তাকে ফোন করলে তিনি হাসপাতালে গিয়ে ইসমামুলের খোঁজ-খবর নেন। যান চলাচল বন্ধ থাকায় আমরা সেদিন ঢাকায় পৌঁছতে পারিনি।
সাক্ষী মো. মহিবুল হক বলেন, পরের দিন সকাল বেলা আমি, আমার আম্মা ও দুই আত্মীয় নিয়ে ঢাকায় আসি। ঢাকায় এসে জানতে পারি, আমার ভাইকে মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমরা গফুর সওদাগরকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের সামান্য কথা হয়। সে সিসিইউতে ছিল। তার অবস্থার অবনতি হলে রাত ১০টার দিকে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। ৭ আগস্ট সকালে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেদিন বিকেল ৪টার দিকে সে ইন্তেকাল করে। কিন্তু, তার পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) হয়নি। ডাক্তাররা পোস্টমর্টেম করেনি। আমরা ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে ইসমামুলের লাশ নিয়ে চট্টগ্রামের নিজ বাড়িতে যাই। আমরা ঢাকা থেকে সন্ধ্যা ৬টায় রওনা দিয়ে রাত ২টায় চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে পৌঁছাই। পরদিন দুবার জানাজা শেষে তাকে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মো. মহিবুল হক বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক এডিসি আক্তারুল ইসলাম, ইমরুল ও আরশাদের নির্দেশে সুজন হোসেন, নাসিরুল ইসলাম, ইমাজ হাসান ইমনসহ আরও অনেকে সেদিন গুলিবর্ষণ করেছে। আমি তাদের বিচার চাই। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এই আমার জবানবন্দি। জবানবন্দি শেষে আসামির আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।
গত ৩ জুন পলাতক চার পুলিশ কর্মকর্তাকে হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২৫ মে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত ২৫ মে এ মামলায় আট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
গত ১৪ জুলাই এ মামলায় পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক শহীদ হন।