এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে সংঘর্ষ : তদন্ত শুরু বিচার বিভাগীয় কমিটির

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) তদন্ত কমিটির সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. আবু তারিকের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা তদন্ত কাজ শুরু করেন।
ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঢাকা থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুরে গোপালগঞ্জে পৌঁছে তদন্ত কাজ শুরু করেন। তারা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর, জেলা কারাগার, এনসিপির পৌরপার্কের সভাস্থলসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ব্যাপারে তারা বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান, আইনও বিচার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, যশোর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের ২১ পদাতিক ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহীদুর রহমান ওসমানী, ঢাকা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসাপাতালের পরিচালক সরদার নুরুল আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে সন্ধ্যা ৭টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. আবু তারিক বলেন, সরকারি অফিসার, পুলিশ, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহযোগিতায় স্পটগুলো দেখেছি। এ সময় ডিজিএফআই, এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য। সংবাদ সম্মেলনে আমাদের বলার কিছু নেই।
কমিটির সভাপতি আরও বলেন, ঘুরে-ফিরে দেখলাম, সব বুঝেশুনে আমরা ইনকোয়ারি (তদন্ত) করছি। আমরা অতিসত্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমাদের কাছে সরকার কিছু নির্ধারিত এজেন্ডা দিয়ে দিয়েছে। তদন্তে নেমে এ এজেন্ডাগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় ঘটে, সে ধরনের সুপারিশও আমাদের করতে হবে। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন, আমাদের তদন্ত কাজ শেষ হয়নি। আমরা সবার প্রাথমিক বক্তব্য নিয়েছি। আমরা আজকেও স্পটে অনেকের বক্তব্য নিয়েছি। আগামীকাল বুধবারও আমরা যতজনের পারি বক্তব্য নিব। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন, এটা একটা গোপনীয় প্রতিবেদন হবে। সেটা সরকার প্রকাশ করবে। আমরা কী পাচ্ছি? কী পাইনি? সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগ। তবে আপনারা (গণমাধ্যম কর্মীরা) যে এসেছেন কষ্ট করে, আমাদের কথা শুনেছেন, আপনারা ইচ্ছে করলে আমাদের কিছু তথ্য দিয়ে আলামত দিয়ে সহয়োগিতা করতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আপনাদের প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক মিডিয়া থেকে অনেক তথ্য পেয়েছি। এজন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমারা আগামীকাল বুধবারও আছি সারা দিন। অপনারা যদি তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন, তাহলে আমরা যে প্রতিবেদন দেব, সেটা আরও ভালো হবে।’
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পাঁচ ঘণ্টার হামলা ও সহিংসতায় ওই দিনই চারজনের মৃত্যু হয়। পরের দিন ১৭ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ঘটনার দিন বিকেলে শহরে ১১৪ ধারা ও রাত ৮টা থেকে ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। পরে কয়েক দফায় কারফিউর সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়। ২০ জুলাই কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেয় জেলা প্রশাসন। তারপর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত করা ১৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের এক হাজার ২৫২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ১৪ হাজার ৯১০ জনকে আসামি করা হয়।