ভালো ফলনে লাভের মুখ দেখছেন লালমনিরহাটের পাট চাষিরা

লালমনিরহাটে নতুন মৌসুমের পাট বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এ বছর ফলন ভালো হওয়া ও বৃষ্টির স্বচ্ছ পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় রঙ হয়েছে আকর্ষণীয়। বাজারদরও সন্তোষজনক হওয়ায় কৃষকরা লাভের মুখ দেখছেন।
জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন হাটে এ বছর পাটের দাম বেড়েছে। গতবছর প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকায়, আর এবার দাম দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। অর্থাৎ, কৃষকরা গত বছরের তুলনায় প্রতি মণে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা বেশি পাচ্ছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রতি মণে তারা সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা লাভ করছেন।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছর লালমনিরহাটে ৩ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো চাষের কারণে প্রতি বিঘায় গড়ে ৯ মণ ফলন হয়েছে।
তবে চাষিদের অভিযোগ, উৎপাদন খরচও বেড়েছে অনেক। কীটনাশক, সেচ, পাট জাগ দেওয়ার শ্যালো মেশিন ভাড়া ও শ্রমিক মজুরি- সব মিলিয়ে প্রতি মণে গড়ে অতিরিক্ত ৩০০ টাকা ব্যয় হয়েছে।
জানা গেছে, জেলার আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ উপজেলার হাটগুলোতে পাটের বেচাকেনা শুরু হলেও সরবরাহ এখনও সীমিত। মূলত আগাম চাষিরাই পাট কেটে শুকিয়ে বাজারে তুলতে পারছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরো পাট বাজারে আনতে আরও দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগবে।
জেলা সদরের বড়বাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে, দামও পাচ্ছি সন্তোষজনক। তবে এই দাম কতদিন থাকবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
কুড়িগ্রামের রাজাহাট থেকে বড়বাড়ীতে পাট বিক্রি করতে আসা মোহাম্মদ সৈয়দ আলী বলেন, সপ্তাহখানেক আগে মণপ্রতি দাম ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা, এখন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। তবুও লাভ থাকায় কৃষকরা খুশি।
পাট ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ জানান, এ বছর পাটের দাম ভালো হলেও উৎপাদন ব্যয়ও বেশি হয়েছে। প্রতি মৌসুমে পাঁচ থেকে দশ হাজার মণ পাট খুলনা-বাগেরহাটের কোম্পানিগুলোতে পাঠাই। তবে এবার মনে হচ্ছে উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ও দাম দুই-ই ভালো হয়েছে। গড়ে কৃষকরা প্রতি মণে এক হাজার টাকা করে লাভ করছেন। তবে পূর্ণমাত্রায় সরবরাহ শুরু হলে চূড়ান্ত বাজার পরিস্থিতি বোঝা যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইফুল আরিফিন বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ায় বিশ্বব্যাপী পাটের চাহিদা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় কৃষকদের জন্য এটি সম্ভাবনাময় একটি খাত।