মাতামুহুরী নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে মেরাখোলা গ্রাম

বান্দরবানের লামা উপজেলায় মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা গ্রামে ভয়াবহ নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলতি বর্ষায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় প্রায় অর্ধশত বসতঘর, শত শত একর আবাদি জমি এবং ইউনিয়নের একমাত্র কবরস্থান নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
লামা সদর ইউনিয়নের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে মাতামুহুরী নদী। ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ১৯২৮ সালে গড়ে ওঠা নামার পাড়া একসময় ছিল ৫০০ পরিবারের বসতভিটা। কিন্তু গত ২৭ বছরে অব্যাহত ভাঙনে পাড়াটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এর সঙ্গে হারিয়ে গেছে একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, তিনটি সড়ক, একমাত্র কবরস্থান ও প্রায় ২০০ একর ফসলি জমি।
এবারের বর্ষায় মেরাখোলা গ্রাম নতুন করে হুমকির মুখে। দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের অর্ধ কিলোমিটার এলাকা প্রতিনিয়ত নদীতে ধসে পড়ছে। গত এক সপ্তাহে কয়েক একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক সোলেমান, মোজাম্মেল, রাহেলা বেগম, আব্দুল হামিদ, রোহানা বেগম, আব্দুর রশিদ, আব্দুর সত্তার, নুর আয়েশা ও সামছুসহ প্রায় অর্ধশত পরিবারের ঘরবাড়ি।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ইব্রাহিম বলেন, আটবার ঘরবাড়ি হারিয়েছি। আবারও নদী ভাঙনের কবলে পড়েছি। নতুন করে জমি কিনে ঘর বানানোর সামর্থ্য নেই। কেউ আমাদের খবরও নেয় না।
লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আক্তার কামাল জানান, মেরাখোলা ও বৈল্লারচর গ্রামের ৫০০ পরিবার এরই মধ্যে গৃহহীন। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
স্থানীয় সর্দার ছব্বির আহমদ ও বাসিন্দা মোজাম্মেল হকের ভাষ্য, বর্তমানে মেরাখোলায় প্রায় এক হাজার পরিবারের বসবাস। এরই মধ্যে অর্ধেক পরিবার নদী ভাঙনে সব হারিয়েছে। কবরস্থানটিও প্রায় বিলীন হয়ে গেছে।
লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই মেরাখোলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে নামার পাড়া পুরোপুরি বিলীন হয়েছে।
ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈন উদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে চিঠি দেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, মেরাখোলা গ্রাম রক্ষায় একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।