রাঙামাটির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, প্রস্তুত ২৪৬ আশ্রয়কেন্দ্র

টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার নিচু এলাকা। এতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে সরকারিভাবে তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে দেখা যায় বাঘাইছড়ি উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি বঙ্গলতলী, মারিশ্যা, রূপকারী, খেদারমারা, বাঘাইছড়ি ও আমতলী ইউনিয়নের অনেক গ্রাম ও ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া বাঘাইছড়ি পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচটি ওয়ার্ড পানিতে তলিয়ে গেছে বন্ধ হয়ে গেছে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। কাচালং নদী ও কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধির ফলে এই নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং নিম্নাঞ্চলের সড়ক প্লাবিত হয়ে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। তবে বিকেলের দিকে কিছু কিছু এলাকায় পানি কমে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আখতার জানান, দুর্গতদের জন্য ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করতে। এ ছাড়া পানিবন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
লংগদু উপজেলার মাইনী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার ঝরনা টিলা, ভাসাইন্যাদম ইউনিয়ন, বগা চত্বর ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া, গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনাগাঁওপাড়া, মাইনী ইউনিয়নের এফআইডিসি বড় কলোনি পানিতে তলিয়ে গেছে। বিলাইছড়ি উপজেলা সদর, ধূপ্পারছড়া, বহলতলী, বাঙ্গালকাটা এলাকাসহ নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতেও কাপ্তাই হ্রদের পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া জেলার নানিয়ারচর ও সদরের নিচু এলাকাও প্লাবিত হয়েছে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুহুল আমিন বলেন, জেলায় ২৪৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বুধবার রাত পর্যন্ত জেলার বাঘাইছড়ি ও লংগদুতে ১৮২টি পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থাকারীদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া কী পরিমাণ মানুষ পানিবন্দি সেই তালিকা তৈরির কাজ চলছে। সেই অনুযায়ী খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কাপ্তাই হ্রদ এলাকায় বৃষ্টিপাতের কারণে হ্রদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট এবার চতুর্থ দফায় তিন ফুট পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত ১১টায় হ্রদের পানি একেবারেই বিপৎসীমার সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকায় কর্তৃপক্ষ গেট তিন ফুট পর্যন্ত খুলে দেয়। এতে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫৮ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে নিষ্কাশন হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি নদীতে নিষ্কাশন হচ্ছে।

কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান বলেন, হ্রদের পানি ১০৮ এমএসএল (মিনস সি লেভেল) অতিক্রম করার পর বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় আড়াই ফুট পর্যন্ত গেট খুলে দেওয়ার পরও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। রাত ১১টায় হ্রদের পানির স্তর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮.৭৯ এমএসএল। পানি ধারণ ক্ষমতা ১০৯ এমএসএলের একেবারেই কাছাকাছি চলে আসায় ঝুঁকি এড়াতে গেট তিন ফুট পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়েছে।
প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান আরও বলেন, আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি তিন ফুট পর্যন্ত গেট খুললে বন্যার আশঙ্কা নেই, তবে এর বেশি হলে বন্যার আশঙ্কা থাকে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে যেন তিন ফুটের বেশি যাতে খুলতে না হয়। তবে ভাটি এলাকার মানুষদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে কাপ্তাই গেট তিন ফুট পর্যন্ত খুলে দেওয়ায় কর্ণফুলী নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা হতে চন্দ্রঘোনা-রাইখালী নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে নদীর দুই পাশে যাত্রী সাধারণ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এতে স্থানীয়রা ছাড়াও রাঙামাটি থেকে বান্দরবানগামী যাত্রীরা বেশি দুর্ভোগ পড়েছে।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান, বাঁধের জলকপাট খুলে দেওয়ায় কর্ণফুলী নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় চন্দ্রঘোনা-রাইখালী নৌরুটে ফেরি চলাচল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে আপাতত বন্ধ রয়েছে।