এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্যে

উত্তাল জুলাই। উত্তাল পুরো বাংলাদেশ। এরপর এলো আগস্ট, আরও বেশি উত্তাল হয়ে উঠল দেশ। কিন্তু আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা আগস্টের প্রথম দিনকে ১ আগস্ট বলতে চাইলেন না। বরং ১ আগস্টকে তারা বললেন ২০২৪ সালের ৩২ জুলাই। এক অদ্ভুত জুলাই। পুরো বাংলাদেশ গুনতে থাকল— ৩৩ জুলাই, ৩৪ জুলাই…।
গণনা চলে, উত্তাপ বাড়ে। রাজধানীসহ দেশের শহরে শহরে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। হামলা-পাল্টা হামলা হচ্ছে। স্থাপনায় স্থাপনায় আগুন দেওয়া হচ্ছে। চারিদিকে আতঙ্ক, কিন্তু কেউ পিছু হটছে না। পক্ষ-বিপক্ষ সবাই এ লড়াইকে চূড়ান্ত হিসেবে নিয়েছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে যে হারলেই ‘ডিসকোয়ালিফাইড’।
দেশের আপামর ছাত্র-জনতা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ হঠাও মিশনে নেমেছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগও আন্দোলকারীদের রুখে দিতে মরিয়া। প্রয়োজনে আরও হত্যা। তবুও পিছু না হটার সিদ্ধান্ত। আর জীবন গেলেও রাজপথ থেকে সরে না যাওয়ার প্রত্যয় আন্দোলনকারীদের। যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র।
পরিস্থিতি এমন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের তৎকালীন উপকমিশনার ইকবাল হোসাইন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে বলেছিলেন, ‘গুলি করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।’
যেভাবে দানা বাঁধে আন্দোলন
পহেলা জুলাই শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলন। সপ্তাহ না পেরোতেই আন্দোলন দানা বাঁধে। ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ মারা যান। আবু সাঈদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির লাইভ নিউজে প্রচার হয়। এই ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এনটিভির সেই ভিডিও ক্লিপ যেন ঘুমন্ত জাতিকে নাড়িয়ে দেয়। ক্ষোভে ফেটে পড়ে দেশ। যেন স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল বাঁধে চারিদিকে।
একইদিন অর্থাৎ ১৬ জুলাই চট্টগ্রামে ছাত্রদলকর্মী ওয়াসিম আকরাম গুলিতে মারা যান। সবমিলে এদিন সারা দেশে ৬ জন নিহত হন। এরপর আর আন্দোলন আর শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল না। বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও দেশের আপামর ছাত্র-জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলনের মাঠে। সরকারও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পুলিশের গুলিতে লাশের পর লাশ পড়তে থাকে, কিন্তু আন্দোলনকারীরা আর পিছু হটে না। সংঘর্ষ-পাল্টা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে থাকে নিয়মিত।
এমন আতঙ্কগ্রস্ত পরিস্থিতির মধ্যে ৪ আগস্ট অর্থাৎ ৩৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা করে— ৬ আগস্ট ‘লং মার্চ টু ঢাকা’। কিন্তু বিএনপিসহ অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পর এ কর্মসূচি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্টে আনা হয়। মানে ‘৩৬ জুলাই’।
৪ আগস্ট আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা ঘোষণা দেন, ‘পরশু (৬ আগস্ট) নয়, কালকেই (৫ আগস্ট) লং মার্চ টু ঢাকা।’ ঐতিহাসিক এ কর্মসূচি এগিয়ে এনে আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘আমরা চূড়ান্ত ঘোষণার জন্য প্রস্তুত। আমরা গণভবনের দিকে যাত্রার জন্য প্রস্তুত। সেই উদ্দেশ্যেই আপনারা সবাই ঢাকায় আসুন।’ এ উত্তাপ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি মোটেও। ৫ আগস্ট গণভবন ঘেরাও করতে সারা দেশ থেকে ঢাকায় লোকজন আসা শুরু করে।
গণভবনের নিরাপত্তা ও রাতের নিস্তব্ধ ঢাকা
এই যখন অবস্থা, তখন গণভবন ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যা ব ও বিজিবিসহ সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে দায়িত্ব পালন শুরু করে। ৪ আগস্ট সকালে গণভবন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ট্যাংক-এপিসি কারসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোনো ব্যক্তিকে গণভবনের সামনের সড়ক দিয়ে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না।
গণভনের চারিদিকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ছিল। সাংবাদিকসহ কাউকে ছবি তুলতে দেওয়া হচ্ছিল না। বরং ছবি তোলার অভিযোগে দুজনকে আটক করে রাখেন এক ম্যাজিস্ট্রেট। সেদিন ‘নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা গণভবন এলাকা’ সংক্রান্তে খবর লেখেন এ প্রতিবেদক।
সময় যত গড়াতে থাকে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হতে থাকে। ৪ আগস্ট সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর মহাখালী, বিজয় সরণি, জিয়া উদ্যানের কোনা, আসাদগেট, কলেজগেট ও চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের কোনায় ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যেন আন্দোলনকারীরা গণভবন ঘেরাও করতে না পারে।
৪ আগস্টের সেই রাতে পুরো ঢাকা ছিল এক ভুতুড়ে নগরীর মতো। নিশ্চুপ। চারিদিকে ভয়। রাত ১২টার দিকে রাজধানীর পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশ থেকে রওনা দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দপ্তর পর্যন্ত কোনো মানুষকে সড়কে দেখতে পাননি এ প্রতিবেদক। কেবল ডিএমপি সদর দপ্তরের সামনে চারজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন। এভাবে মগবাজার ফ্লাইওভার হয়ে মহাখালী গিয়ে দেখা যায়, সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যারিকেড দিয়ে ফার্মগেটমুখী পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে।
মহাখালী দিয়ে ঢুকতে না পেরে হাতিরঝিল হয়ে কারওয়ান বাজার ঘুরে বিজয় সরণি যাওয়া যায়। কিন্তু কারফিউ পাস থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ প্রতিবেদককে ঢুকতে দেয়নি। পরে এক সেনা সদস্য এসে সবকিছু বিস্তারিত দেখে ভেতের ঢুকতে দেন।
যেতে যেতে দেখা যায়, জিয়া উদ্যানের কোনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের ব্যারিকেডে সেনাবাহিনী-বিজিবির অবস্থান। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের গেটেও পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ ছাড়া কলেজগেট-আসাদগেটে ছিল বিশাল ব্যারিকেড। সঙ্গে ছিল পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। উদ্দেশ্য একটাই— গণভবনের নিরাপত্তা দেওয়া।
গণভবনের ভেতরের উত্তেজনা, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ
৪ আগস্ট দিন-রাতে গণভবনের বাইরে যেমন নিরাপত্তা, ভেতরে ছিল চরম উত্তেজনা। আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট সঙ্গীরা রাতে গণভবনে বৈঠক করে। তাদের সিদ্ধান্ত ছিল, যেকোনো মূল্যে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করা। রাতে অনুষ্ঠিত অন্য বৈঠকে তিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ঊর্ধ্বতনরা উপস্থিত ছিল।
সূত্র মতে, আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকার প্রসংশা করেন সাবেক পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে, সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় বৈঠকে। এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের উদ্দেশে বলেন, দেশে জঙ্গি হামলা হচ্ছে। বিএসএমএমইউর গাড়িতে আগুন দেওয়া হলো। দেশের অন্যান্য সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী কেন তা রুখবে না?
৪ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ছাত্র-জনতার। সেদিন তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভেতরে থাকা অনেক গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গ টেনে তুলে বৈঠকে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনাকে জানান, হাসপাতালের গাড়িতে আগুন দেওয়ার ভিডিও ও ছবি আছে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, গাড়িতে আগুন দিচ্ছে ‘যুবলীগ-ছাত্রলীগ’। ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান নেওয়ার পর গাড়িতে আগুন দেয়। এটা জঙ্গি হামলা হলে করেছে ওরাই।
তৎকালীন পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনও বৈঠকে জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষেও আর বেশি সময় এ রকম কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের আর কিছু করার সামর্থ্য নেই। বাংলাদেশের অধিকাংশ থানায় হামলা করা হয়েছে। পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। গোলাবারুদও আর অবশিষ্ট নেই। ফোর্সও টায়ার্ড হয়ে পড়েছে।
বৈঠক শেষ করে যখন সবাই চলে যান, তখনও তিন বাহিনীর প্রধান সেখানে ছিলেন। সূত্রে জানা গেছে, সে সময় সেনাপ্রধান শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন সকালের মধ্যে।
৪ আগস্ট রাতভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে উত্তেজনা আর গুজবে ঠাসা ছিল। ৫ আগস্ট কেউ রাস্তায় নামলে তাদের নিবৃত্ত করার কথা জানিয়েছিল তৎকালীন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। জারি ছিল কারফিউ। বিপরীতে কারফিউ ভেঙে রাজপথ দখলের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। সকাল থেকেই আন্দোলনকারীরা ঢাকার রাজপথ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। সেজন্য, পুলিশ কোথাও কোথাও নির্বিচারে গুলি চালায়। মানুষ হত্যা করে। এসব উপেক্ষা করেও জনতা রাস্তায় নামে শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে।
শেখ হাসিনার পলায়ন
৫ আগস্ট সকালে তিন বাহিনীর প্রধান আবার গণভবনে যান। সামরিক কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে আবারও ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী রেগে গিয়ে বলেন, তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেল এবং গণভবনে কবর দিয়ে দাও। সামরিক কর্মকর্তারা শেখ রেহানাকে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগে রাজি করাতে অনুরোধ করেন। তারা এ কথাও বলেন যে, সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির কারণে গণভবন অভিমুখে ঢাকার চারপাশ থেকে মিছিল আসছে। শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে বড় বোন শেখ হাসিনার পা জড়িয়ে ধরেন রেহানা। কিন্তু শেখ হাসিনা রাজি হচ্ছিলেন না।
পরে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে কথা বলেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। জয়কে বলা হয়, প্রাণে বাঁচাতে হলে তার মায়ের পদত্যাগ করা ছাড়া উপায় নেই। টাইম একটা ফ্যাক্টর। এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জয় পরিস্থিতি জানার পর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। অবশেষে জয়ের কথায় ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা। তিনি টেলিভিশনে প্রচারের জন্য একটি ভাষণ রেকর্ড করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে সামরিক কর্মকর্তারা অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাগ গোছাতে ৪৫ মিনিটের সময় দেন। কারণ গণভবন অভিমুখে লাখ লাখ ছাত্র-জনতার যে মিছিল আসছে তা সেই সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবে। ছাত্র-জনতার এই স্রোত ছিল ৩৬ দিনের অভাবনীয় আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ।
বিজয় উল্লাস ও গণভবনে ছাত্র-জনতা
৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশ আন্দোলনকারী সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল মোড়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের অবস্থান। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের শাহবাগে যেতে বাধা দেয়নি। বরং সহযোগিতা করেছিল। আন্দোলনকারীরাও তাদের কথা শুনে ওই মোড়েই লাঠি-সোঁটা ফেলে দিয়ে শাহবাগে প্রবেশ করেন। এভাবে দুপুর ২টার মধ্যে শাহবাগ ভরে ওঠে লাখ লাখ জনতায়।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ করার কথা জানিয়ে দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে প্রথম সংবাদ পরিবেশন করেন এএফপির ব্যুরো চিফ সাংবাদিক শফিকুল আলম। যিনি বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২টা ৫২ মিনিটে হাসিনার পালনোর খবর প্রকাশ করে এএফপি। তখন থেকে এএফপির বরাত দিয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করে।
এ খবর রটে যেতে খুব একটা সময় লাগেনি। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা জানতে পারে, শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। এরপর থেকে মানুষের বাঁধভাঙা উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মতো। আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থেকে গণভবনমুখী যাত্রা শুরু করে। অন্যদিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে ছাত্র-জনতার স্রোত যেতে থাকে গণবভনের দিকে। শুধু তাই নয়, ঢাকায় প্রবেশের যত পথ ছিল, সব দিক দিয়েই হুড়মুড় করে গণভবনমুখী হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা।
কিন্তু শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনের পরও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সাভারসহ নানা স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে আন্দোলনকারীদের ওপর। সাভারে আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার মতোও ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার পর ছাত্র-জনতাও পুলিশের ওপর চড়া হয়। যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে ছাত্র-জনতা।
একসময় ছাত্র-জনতা একাকার হয়ে গণভবনে প্রবেশ করে। প্রবেশের মাত্র ৩০ মিনিট আগে শেখ হাসিনা ভারতের উদ্দেশে গণভবন ছাড়েন।
এদিকে লাখ লাখ ছাত্র-জনতা গণভবনে প্রবেশ করে শেখ হাসিনার থাকার জায়গাসহ বেশকিছু কক্ষ ভাংচুর করে। গণভবনের পুকুরে নেমে ধুয়ে মুছে ফেলে সাড়ে ১৫ বছরের জমে থাকা ক্ষোভ। রাগে ক্ষোভে তছনছ করে দেওয়া হয় শেখ হাসিনার বাসস্থান। বিজয়োল্লাস করে ছাত্র-জনতা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে রাত বাড়ে, কিন্তু বিজয় উল্লাস থামে না। এভাবেই বাংলাদেশে ঘটে যায় এক সফল গণঅভ্যুত্থান।