চুয়াডাঙ্গায় ‘বিত্তি’ তৈরির ধুম

চুয়াডাঙ্গায় এবারের বর্ষায় গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আষাঢ়ের আগেই শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে জেলার চারটি উপজেলার বিল, বাওড়, পুকুর, ডোবা ও জলাশয় পানিতে থইথই। এতে দেশীয় মাছের উৎপত্তি বেড়েছে, আর সেই সঙ্গে বেড়েছে মাছ ধরার উপকরণ ‘বিত্তি’ তৈরির চাহিদা। এই চাহিদা মেটাতে সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের শৈলমারী গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবার এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শৈলমারী গ্রামের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই বাঁশ, তাল গাছের আঁশ ও নাইলনের সুতা দিয়ে হাতে তৈরি করছেন বিত্তি। তাল গাছের ডগা পচিয়ে সুতা তৈরির পর তা বাঁশের কাঠির সঙ্গে বুনে বানানো হয় মাছ ধরার এই প্রাচীন ফাঁদ। বর্ষায় পুঁটি, টাকি, কাটরা, চিংড়ি, বাইনসহ নানা দেশি মাছ ধরতে এ বিত্তির জুড়ি নেই। প্রতিটি বিত্তি বাজারে বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায়। গ্রাম থেকেই সপ্তাহে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার বিত্তি বিক্রি হচ্ছে।
কারিগর মন্টু মিয়া বলেন, বেশি বৃষ্টির কারণে এ বছর চাহিদা দ্বিগুণ। একেকটি বাঁশ কিনতে হয় ২০০-২৫০ টাকায়, আর তাল গাছের ডগা ৩০ টাকায়। এতে একেক বাঁশ থেকে তিন-চারটি বিত্তি তৈরি করা যায়।
মর্জিনা খাতুন বলেন, বিয়ের পর শাশুড়ির কাছ থেকে বিত্তি তৈরির কাজ শিখেছি। এখন সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। রান্না করার সময় পর্যন্ত পাই না।
কারিগর তানভীর রহমান বলেন, গত বছর এই সময়ে কেউ বিত্তি কিনতে চাইত না। এবার অর্ডার এত বেশি যে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেই যাচ্ছি।
জেলার শিয়ালমারি হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যাপারীরা ব্যাপক হারে বিত্তি কিনছেন। তবে স্থানীয়রা জানায়, এই পেশা শুধু বর্ষাকালেই জমে ওঠে। তাই সরকারের কাছে হাতুড়ি, করাত, সুতালি ইত্যাদি সরঞ্জামের সহায়তা চান তারা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার অনেক বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে খাল, বিল ও ডোবায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ছোট মাছ ধরতে প্রয়োজন হয় বিত্তির। স্থানীয়ভাবে এটা তৈরি হচ্ছে। জেলায় বর্তমানে বিত্তির চাহিদা বেড়েছে। বৃষ্টির কারণে বৃত্তি তৈরির কারিগরদের চাহিদা বেড়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে এ শিল্পটা জড়িত। তিনি বলেন, উপজেলা অফিসে যোগাযোগ করলে বিত্তি তৈরির যে সব উপকরণ লাগে সেটা সরবরাহ করার চেষ্টা করা হবে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, গত বছর জুলাই মাসে জেলায় ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এ বছর জুলাই মাসে ৪১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।