গলদা চিংড়ি উৎপাদনে শীর্ষে বাগেরহাট

বাংলাদেশে গলদা চিংড়ি উৎপাদনে বাগেরহাট শীর্ষে রয়েছে। সমগ্র দেশের মধ্যে বাগেরহাটে গলদা চিংড়ি উৎপাদনের হার ৩৪ শতাংশ। বাংলাদেশের মিঠা পানিতে প্রায় সব এলাকাতেই গলদা চাষ করা সম্ভব হলেও পিএল (পোস্ট লার্ভা) প্রাপ্যতার অভাবে সব জায়গায় চাষিরা ব্যাপকভাবে চাষ করতে পারেন না।
বাংলাদেশের গলদা চিংড়ি বিশ্ববাজারে সুস্বাদু হিসেবে পরিচিত। গলদার উল্লেখযোগ্য ক্রেতা এখন বাংলাদেশেই বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি ও নেদারল্যান্ডে ভালো চাহিদা রয়েছে। এছাড়া আরববিশ্ব, ভারত, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতেও গলদা রপ্তানি হচ্ছে।
সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাগেরহাটে ২৩ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমিতে ৫৪ হাজার ৮৪৮টি গলদা ঘেরে মোট ৩২ হাজার ৬৩০.৯৫ মেট্রিক টন গলদা চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে। পাশাপাশি রুই, কাতলা, মৃগেল, পুটি ইত্যাদি সাদা মাছের উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৯১৪.২১ মেট্রিক টন। বাজারে গলদার প্রতি মণ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাগেরহাটের ৯টি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৭৬১ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার ৪৬৫টি ঘেরে ৯ হাজার ২৫২ মেট্রিক টন গলদা উৎপাদিত হয়েছে। কচুয়ায় ১ হাজার ১৫ হেক্টরে ৩ হাজার ৪৫১টি ঘেরে উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ২৬ মেট্রিক টন। মোরেলগঞ্জে ৭১৩ হেক্টরে ১ হাজার ১৭০টি ঘেরে উৎপাদন ১ হাজার ৮৮৬ মেট্রিক টন।
চিতলমারিতে ৫ হাজার ৯২০ হেক্টরে ১৫ হাজার ২৩৭টি ঘেরে উৎপাদন ৮ হাজার ৮০৩ মেট্রিক টন। ফকিরহাটে ২ হাজার ৬৩০ হেক্টরে ৫ হাজার ৭৭৯টি ঘেরে উৎপাদন ৩ হাজার ৮৫৫.২৫ মেট্রিক টন। মোল্লাহাটে ৪ হাজার ৯৩ হেক্টরে ১২ হাজার ৭৪০টি ঘেরে উৎপাদন ৫ হাজার ৮ মেট্রিক টন।
রামপালে ১ হাজার ৬৩০ হেক্টরে ৪ হাজার ৮৯০টি ঘেরে উৎপাদন ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। মোংলায় ৮৬৯ হেক্টরে ১ হাজার ৮৫০টি ঘেরে উৎপাদন ৭২৮.৭ মেট্রিক টন। শরণখোলায় ৬২৭ হেক্টরে ১ হাজার ২৬৬টি ঘেরে উৎপাদন ৫২২ মেট্রিক টন।
গলদা চিংড়ি বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। স্থানীয় বাজারে গ্রেড অনুযায়ী প্রতি কেজি গলদা বিক্রি হচ্ছে গড়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা এবং বিদেশে গড়ে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে মোট উৎপাদনের আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। প্রতি হেক্টরে মাছের রেনুপোনা, খাবার ও পরিচর্যায় ব্যয় হয় সর্বোচ্চ ২ লাখ ৪৪ হাজার থেকে ২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিহেক্টরে মাছ বিক্রি করে আয় হয় ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত, যার ফলে প্রায় অর্ধেকই থাকে মুনাফা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস জানান, বাগেরহাটে ক্রমশ গলদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে এবং স্থানীয় বাজারেও এর ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বাগেরহাট জেলা কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, চাষের শুরুতে যদি পিএল (পোস্ট লার্ভা) ১-১.৫ মাস নার্সিং করে তারপর ঘেরে ছাড়া হয়, তাহলে চিংড়ির বাঁচার হার অনেক বেড়ে যায়। অনেক চাষি নার্সিং ছাড়াই সরাসরি দুর্বল পিএল ঘেরে ছাড়েন, ফলে উৎপাদন কমে যায়। গলদা চিংড়ি স্বজাতিভোজী হওয়ায় একই আকার, জাত ও বয়সের পিএল ছাড়া এবং আশ্রয়স্থল নিশ্চিত করা হলে বাঁচার হার বৃদ্ধি পায়। চিংড়ি ঘেরের গভীরতা বাড়ালে অনুকূল তাপমাত্রা ও পানির মান বজায় রাখা সহজ হয়। অনুকূল পরিবেশে মাত্র ৬ মাসেই বিক্রয়যোগ্য আকারের গলদা পাওয়া যায়।
তিনি আরও জানান, ফকিরহাট উপজেলার কেরামত আলী ১৯৭৭ সালে দেশে প্রথম গলদা চাষ শুরু করেন। তার সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজারো মানুষ চিংড়ি চাষে এগিয়ে আসে। ফকিরহাট আজ পরিচিত 'বাংলার কুয়েত' নামে। সাদা সোনা খ্যাত গলদা চাষে এই অঞ্চলের মানুষ সচ্ছল জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।