আদালতে বাশারকে ডিম নিক্ষেপ, মারলেন কিল-ঘুষি-লাথিও

রাজধানীর গুলশান থানার অর্থ পাচার মামলায় বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার বাহারের ১০ দিন রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহ এ আদেশ দেন। এদিন আদালতে তোলার সময় খায়রুল বাশার বাহারের ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন এবং তাকে কিল, ঘুষি ও লাথি মারেন ভুক্তভোগীরা।
এর আগে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে খায়রুল বাশার বাহারকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) খালিদ সাইফুল্লাহ। আদালতে তোলার সময় আসামি খায়রুল বাশার বাহারের হাতে হাতকড়া, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং মাথায় হেলমেট পড়া ছিল। তাকে সিএমএম আদালতে তোলার সময় তার ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষেরা। এরপর তাকে দ্রুত আদালতে তোলা হয়। এ সময় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা ভুক্তভোগীরা তাকে কিল, ঘুষি, লাথি মারেন। অকথ্য ভাষায় তাকে গালিগালাজ করা হয়।
আদালতের বিচারক এজালাসে উঠলে তার রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন খন্দকার। তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত আসামি খায়রুল কাশার বাহার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান। লন্ডন, আমেরিকা, কানাডাসহ ইউরোপ দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ক্যামব্রিয়ানের অনেক শিক্ষার্থীর জীবন শেষ। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো কাজ করেছে। বর্তমান যুগের নমরুদ সে। প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে বাশার বাহিনী গঠন করেছে। যারা টাকার জন্য যেত তাদের ওপর নির্যাতন চালাত।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে আরও বলেন, ‘তার (বাশার) কারণে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেছে। অভিভাবকরা পথে পথে ঘুরছে দেউলিয়া হয়ে। তার কারণে বাবা ছেলেকে, আবার ছেলে বাবাকে হারিয়েছে। এখন সময় এসেছে, তাকে ধরতে পেরেছি। তার ১০ দিন রিমান্ডে নিতে আবেদন করছি।’
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, ‘আসামি রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে শিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবে ব্যবহার করেছে। তিনি চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি একজন কুলাঙ্গার। আমরা তার সর্বোচ্চ রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।’
এরপর আদালতের বিচারক খায়রুল বাশারকে প্রশ্ন করেন, ‘এই কাজগুলো কেন করলেন? ‘ তখন খায়রুল বাশার নিশ্চুপ ছিলেন। ফের বিচারক বলেন, ‘কোনো কারণে যদি বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হন বা অপরাগ হন, তাহলে কেন টাকা ফেরত দেননি?’ তখনও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
বিচারক এরপরে বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে কতটা মামলা হয়েছে জানেন?’ তখন খায়রুল বাশার বলেন, আনুমানিক ৭০টা হয়েছে। তখন বিচারক বলেন, যত মামলা হয়েছে, মোকাবিলা করতে গেলে তো সারা জীবন কারাগারে কেটে যাবে। তখন বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, টাকাগুলো যে আত্মসাৎ করলেন, আপনার মানবিক সত্ত্বা জাগ্রত হয়নি? কয়টা বিয়ে করেছেন? উত্তরে আসামি বাশার জানান, দুইটা। তখন বিচারক প্রশ্ন করেন, আপনার সন্তান কয়জন? তখন বাশার বলেন, ছয়জন। বিচারক বলেন, টাকা নিয়ে এসব শিক্ষার্থীর জীবন কেন হুমকির মুখে ফেলে দিলেন। একবারও কি আপনার সন্তানদের কথা মনে পড়েনি? এরপরে বিচারক আসামির ১০ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিকে আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিলের শুনানি করতে চাইলে উপস্থিত আইনজীবী ও সাধারণ মানুষদের তোপের মুখে তিনি শুনানি করতে পারেননি।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, আসামি বাশার, তার স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন ও ছেলে আরশ ইবনে বাশার চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ১৪১ শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনায় গত ৪ মে সিআইডির উপপরিদর্শক রুহুল আমিন বাদী হয়ে মামলা করেন।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার বাহারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।