বাস মালিকদের কাছে চাঁদা দাবি করা সেই যুবদলনেতার বিরুদ্ধে মামলা

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে চলাচলকারী ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’কোম্পানির পরিবহণে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা সেই যুবদলনেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল রোববার (১৩ জুলাই) রাতে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস কোম্পানির মালিক ওয়ালি উল্লাহ খান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মুশফিকুর রহমান ওরফে ফাহিম ছাড়াও ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
যুবদলনেতা মুশফিকুর ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস কোম্পানির বাসমালিকেরা। গত বুধবার থেকে তিনি কোম্পানিটির কোনো বাস ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যেতে দিচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়।
এ ঘটনার পর মুশফিকুর রহমানকে যুবদলের সব ধরনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বাসমালিকেরা জানান, গতকাল বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যাত্রাবাড়ীতে গিয়ে মুশফিকুরের লোকজনকে তাড়িয়ে দেন। এরপর শরীয়তপুরের বাসগুলো যাত্রাবাড়ীতে যাতায়াত শুরু করেছে। বর্তমানে তাঁদের পরিবহণগুলোকে যাত্রাবাড়ীতে চাঁদা দিতে হচ্ছে না।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, মুশফিকুর রহমান ও তাঁর ২৫ জন সহযোগীর বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় গতকাল রাতে চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছে। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয় ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করতেন। ওই দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শরীয়তপুরের পরিবহণগুলোকে ঢাকায় চলাচল করতে আর কাউকে চাঁদা দিতে হচ্ছে না।
শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রুপের সভাপতি ও শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ‘মুশফিকুর রহমানের লোকজন আমাদের গাড়ির প্রতিটি ট্রিপ থেকে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিত। আমরা তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলাম। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার পর প্রশাসন তৎপর হয়েছে। এখন আর যাত্রাবাড়ীতে কোনো চাঁদা দিতে হচ্ছে না।
বাসমালিক ও শ্রমিকেরা জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর ২০২২ সালের জুনে ঢাকার সঙ্গে শরীয়তপুরের সরাসরি বাস চলাচল শুরু হয়। শরীয়তপুরের আটটি কোম্পানির অন্তত ২৫০টি বাস চলাচল করছে। এর মধ্যে জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রুপের অধীন শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামের কোম্পানির বাস চলে ১৭০টি। শরীয়তপুর শহর ও নড়িয়া থেকে এসব বাস ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যাতায়াত করে।
বাসমালিক ও শ্রমিকদের অভিযোগ, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যাত্রাবাড়ীতে বাসের কাউন্টারগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন যুবদলনেতা মুশফিকুরের লোকজন। তিনি শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি মাসে আট লাখ টাকা চাঁদা নিতেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে তিনি কোম্পানিটির কাছে এককালীন পাঁচ কোটি টাকা ও কোম্পানির নামে ১০টি বাস চালানোর দাবি জানান। বাসমালিকেরা এ দাবি না মানলে মুশফিকুরের লোকজন যাত্রাবাড়ীতে শরীয়তপুরের বাস যেতে বাধা দেন এবং বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ১০টি বাস ভাঙচুর করেন। পরে থানায় অভিযোগ ও মামলা করেন বাসমালিকেরা।
মামলা হওয়ার পর যুবদলের সাবেক নেতা মুশফিকুর রহমান আত্মগোপনে চলে গেছেন। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।