রাজশাহীর নভোথিয়েটার দর্শকশূন্য, বিদ্যুৎ বিলেই খরচ ৮০ লাখ

রাজশাহীতে নির্মিত নভোথিয়েটার দর্শকশূন্যতায় ধুঁকছে। প্রায় ৩৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্ল্যানেটেরিয়াম ও বিজ্ঞানভিত্তিক মনোরঞ্জন কেন্দ্রটি উদ্বোধনের দুই বছর পার করলেও দর্শক আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে মাস শেষে নভোথিয়েটারের আয় দিয়ে বিদ্যুৎ বিল মেটানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে রাজশাহী নগরীর তৎকালীন শহীদ কামারুজ্জামান উদ্যানের সামনে ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নভোথিয়েটারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খরচ যোগ করে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ৩৭১ কোটি টাকা। এই স্থাপনাটিতে রয়েছে ২০০ আসনের মাল্টিপারপাস হল, ৬০ আসনের সভাকক্ষ, আধুনিক সায়েন্টিফিক লাইব্রেরি, নভো ক্যাফেটেরিয়া ও স্ন্যাকস বার, ৮৫টি গাড়ির পার্কিং সুবিধা, দেশের সর্ববৃহৎ গম্বুজাকৃতির প্ল্যানেটেরিয়াম, অত্যাধুনিক ফাইভজি থিয়েটার ও আধুনিক পর্যবেক্ষণ টেলিস্কোপ।
তবে এসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্থাপনাগুলোর অনেকগুলোই অপারেটর সংকটে অচল হয়ে আছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি প্রদর্শনী হওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ দিন তা নেমে আসে এক বা দুটি শোতে। কখনও তিনটি শো হলেও দর্শকসংখ্যা হয় মাত্র ১০ থেকে ১৫ জন। প্ল্যানেটেরিয়াম শো চালু না থাকলে দর্শনার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে নভোথিয়েটারের মোট আয় হয়েছে ৪৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা, আর ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। শুধু বিদ্যুৎ বিল বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা, যা মাসে গড়ে প্রায় ৭ লাখ। চলতি বছরের মে মাসে বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। এর বাইরে কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, আনসার সদস্যদের নিরাপত্তা ভাতা, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচ্ছন্নতা, পানি ও অন্যান্য খরচ রয়েছে।
দর্শনার্থীদের অভিযোগ, রাজশাহীর মতো একটি বিভাগীয় শহরে এত বড় প্রকল্প স্থাপন করা হলেও এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি। প্রযুক্তিগত ঘাটতি, জনবল সংকট, সচেতনতার অভাব এবং পর্যাপ্ত বিপণন কার্যক্রম না থাকায় এখনো দর্শক টানতে পারছে না এই আধুনিক বিজ্ঞান কেন্দ্রটি।
তাদের দাবি, নভোথিয়েটারের মতো স্থাপনাকে টিকিয়ে রাখতে হলে নিয়মিত প্ল্যানেটেরিয়াম শো চালু রাখতে হবে, জরুরি ভিত্তিতে অপারেটর ও জনবল নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি স্কুল-কলেজ পর্যায়ে প্রচার ও অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, টিকিট মূল্য যৌক্তিক রাখতে হবে এবং প্যাকেজ সুবিধা দিতে হবে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রচারণা জোরদার করতে হবে। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনায় পরিচালিত হলে এটি রাজশাহীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
প্রথমবার নভোথিয়েটার দেখতে আসা দর্শনার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা-মায়ের কাছে ঢাকার নভোথিয়েটারের কথা শুনেছি। রাজশাহীতেও এটি আছে শুনে আশায় এসেছিলাম। কিন্তু প্ল্যানেটেরিয়াম শো না থাকায় কিছুই দেখা হলো না।’
তাবাসসুম খাতুম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভেতরের পরিবেশ ও থ্রিডি প্রদর্শনী দারুণ লেগেছে। তবে টিকিটের দাম একটু বেশি। টিকিট সাশ্রয়ী হলে আরও দর্শক আসত।’
নভোথিয়েটারের উপ-পরিচালক এবাদত হোসেন বলেন, ‘দর্শক বাড়াতে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা শিক্ষাসফরের অংশ হিসেবে এখানে আসতে পারবে। বিজ্ঞানচর্চার পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যেই কাজ করছি। আমরা চাই, এই কেন্দ্র শুধু বিনোদনের না হয়ে শিক্ষার অংশ হোক। সেই উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা আরও সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে।’