গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া পৌর এলাকার ১৯৩ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

গোপালগঞ্জে যৌথ অভিযানে ১৯৩টি পাকা, আধা পাকা ও কাঁচা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। আজ রোববার (১৫ জুন) সকালে কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর বাজার, মহুয়ার মোড় ও বাপার্ড এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সি ও প্রবীর কুমার বিশ্বাস।
অভিযানে জেলা পরিষদের ৫০টি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮৩টি এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় ৬০টিসহ মোট ১৯৩টি অবৈধ পাকা, আধা পাকা ও কাঁচা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় অংশ নেন গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় জাকারিয়া ফেরদৌসসহ পুলিশ, র্যাব, সেনা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও গ্রাম পুলিশ সদস্যরা।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাসেল মুন্সী বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর বাজার, মহুয়ামোড়, বাপার্ড ও ঘাঘর বাজারের কুরপালা রোড এলাকায় জেলা পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে দেদারসে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছিল একটি মহল। ১৪ দিন আগে এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দখলদারদের নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা অবৈধ স্থাপনা সারায়নি। এ কারণে আজ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ১৯৩টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সরকারি জমি উদ্ধারে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, আমাদের জায়গা থেকে ৬০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত সম্পত্তির মূল্য প্রায় দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি জায়গা দখল করে ঘাঘর বাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের, বাপার্ডের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এবং মহুয়ার মোড়ে জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৯৩টির কথা বলা হলেও দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
মহুয়া মোড়ের চায়ের দোকানদার মোক্তার গাজী বলেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এই চায়ের দোকানটি দিয়েছিলাম। এই দোকানের আয়ে আমার সংসার চলতো। দোকানটি ভেঙে ফেলায় কীভাবে সংসার চালাবো? কীভাবে এনজিওর টাকা শোধ করবো? এখন আর মরা ছাড়া কোন উপায় নাই।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কালাম মৃধা বলেন, আমার দোকানটির আয়ে ছয় সদস্যের পরিবার চলতো। এখন কীভাবে সংসার চলবে? একটি মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ছোট তিন সন্তান স্কুলে পড়ে। হয়তো বা তাদেরকে আর লেখাপড়া করাতে পারব না। সংসার চালাত মানুষের কাছে হাত পাতা ছাড়া আর কোনো পথ দেখছি না।
আরেক ব্যবসায়ী সিরাজ তালুকদার বলেন, যাদের দোকান ঘর ভাঙা হয়েছে তারা অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এই ব্যবসার ওপর দিয়েই তাদের সংসার চলতো। দোকান ঘরগুলো ভাঙার কারণে কয়েক হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়ল। বেকারের সংখ্যা বেড়ে গেলে এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এভাবে দোকান না ভেঙে এদেরকে আইনের আওতায় এনে বন্দোবস্ত দিলে এরাও বেকার হতো না, সরকারও রাজস্ব পেতো। তাই আমি দাবি করবো সরকার যেন এই ব্যবসায়ীদের দোকান ঘরের জায়গাগুলো বন্দোবস্ত দেয়। তা হলে তারা ক্ষতি পুষিয়ে কোনভাবে বেঁচে থাকতে পারবে।