চাঁদা না দেওয়ায় সেনাসদস্যকে মারধর, গ্রেপ্তার ৫

গোপালগঞ্জে চাপাইল সেতু পারাপারের সময় চাঁদা না দেওয়ায় সেনাসদস্য কর্পোরাল মো. সাজ্জাদ হোসেনকে (৩০) মারধরের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সেনাসদস্য সাজ্জাদের বাবা মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন।
এর আগে বুধবার বিকেলে মো. সাজ্জাদকে মরধর করা হয়। পরে বিকেলে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে। আজ সদর থানায় মামলা হওয়ার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
জানা গেছে, আহত কর্পোরাল মো. সাজ্জাদ সেনাবাহিনীর ঢাকা হেডকোয়ার্টারে কর্মরত রয়েছেন। তিনি নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানার নড়াগাতী গ্রামের মো. মনিরুজ্জামানের ছেলে।
মামলার আসামিরা হলেন—গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ফকিরকান্দি গ্রামের এস এম মাহামুদ (৩৫), পুরাতন মানিকদাহ গ্রামের সাগর বিশ্বাস (২৬), সাগরের ভাই টুটুল বিশ্বাস (৩১), জসিম বিশ্বাস (৪০), সৌরভ বিশ্বাস (১৮), মানিকদাহ গ্রামের কালু (২৪), ইমন সিকদার (১৮), সাহিন ভূইয়া (২১), কাজীর বাজার এলাকার আল-আমিন (৩০), চর সোনাকুড় গ্রামের শিমুল সিকদার (২৭) এবং নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার চাপাইল গ্রামের আনোয়ার শেখ (৬৫)।
পুলিশ জানায়, আসামিদের মধ্যে পাঁচজনকে যৌথবাহিনী গতকাল বুধবার (১১ জুন) ঘটনাস্থল, লঞ্চঘাটসহ গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আটক করে গোপালগঞ্জ থানায় সোপর্দ করেছে।
আহত কর্পোরাল মো. সাজ্জাদ আহম্মেদ বলেন, ‘আমি গ্রামে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করি। ঈদের ছুটি শেষে একটি পিকআপে সংসারের আসবাবপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বুধবার বিকেলে কর্মস্থল ঢাকা সেনা হেডকোয়ার্টারের উদ্দেশে রওনা দেই। পিকআপ চাপাইল সেতু পার হয়ে বিকেল সাড়ে ৩টায় গোপালগঞ্জের অংশে পূর্ব পাড়ে এলে সাগর, জসিমসহ সাত থেকে আটজন সেতু পারাপারের টোল হিসেবে চাঁদা দাবি করে। টোলবিহীন এ সেতুতে আমি টোল বা চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। সেনা সদস্য পরিচয় দিলে তারা আরও ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে গায়ে হাত তোলে। পরে গাড়ি থেকে নামিয়ে লাঠিসোঁটা দিয়ে মারধর করে। এতে আমার কপাল কেটে যায়, যেখানে তিনটি সেলাই লেগেছে। পাশাপাশি একটি চোখে আঘাতে রক্ত জমাট হয়েছে। গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ঢাকা হেডকোয়ার্টারে চলে এসেছি। এখন সিএমএইচ থেকে চিকিৎসা নেব।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নয়ন কুমার সাহা জানান, হামলার একটি ভিডিও পেয়েছি। হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল হোতাদের ধরতে আমরা তৎপর রয়েছি।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আটক পাঁচজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্য হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘চাপাইল সেতু আমাদের গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন। এ সেতু দিয়ে সাধারণত গোপালগঞ্জ, নড়াইল, বাগেরহাট ও খুলনা জেলার হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। সেতুটি টোল ফ্রি। এখানে টোল আদায়ের কোনো ব্যবস্থা নেই, কিংবা আমরা এখানে টোল আদায়ের জন্য কোনো ঠিকাদার নিয়োগ করিনি। তাই এই সেতুতে টোল আদায় করা হয় না। আমরা কাউকে ইজারা দেইনি।’