ইউএনওর দিকে তেড়ে গেল জনতা, পুলিশ যাওয়ায় রক্ষা

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লীরা তরফদারের দিকে তেড়ে গেছে জনতা। পরে পুলিশ এসে তাঁকে রক্ষা করে এবং নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।
আজ বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফুলবাড়ীয়া কলেজ ক্যাম্পাসে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল সেখানে ছিল।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন মানবাধিকার কমিশনার অধ্যাপক আখতার হোসেন, পরিচালক (অভিযোগ ও অনুসন্ধান) অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শরিফ উদ্দীন, সদস্য জয়দেব চক্রবর্তী ও আনিসুর রহমান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারীকরণের দাবিতে গত রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে মানবাধিকার কমিশনের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজ প্রাঙ্গণে যান। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ইউএনও লীরা তরফদারকে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজন। তাঁরা ইউএনওকে ‘খুনি খুনি’ বলে বিক্ষোভ করতে থাকেন এবং ইউএনওর দিকে তেড়ে যান। বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা এসে ইউএনওকে সেখান রক্ষা করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান।
এদিকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী তদন্তের পর মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত দল অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন।
মানবাধিকার কমিশনার অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেন, ‘এখানে দুজন মানুষ মারা গেছে। কোনো আন্দোলনেই মানুষ মারা যাওয়া কাম্য হতে পারে না। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার হলো সর্বোচ্চ মানবাধিকার। সে অর্থে এখানে অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। তবে আমরা অবশ্যই দেখার চেষ্টা করব কার কী ভূমিকা ছিল, কোথায় গাফিলতি ছিল, কী করলে পরিস্থিতি আমরা এড়াতে পারতাম। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য কী কী করা যায় সেটি তদন্ত প্রতিবেদনে থাকবে। এবং সেটা মিডিয়াতে আমরা যথাসময়ে জানাব।’
দায়ী পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মানবাধিকার কমিশনার বলেন, ‘তদন্তে আমরা সেই বিষয় তুলে ধরব। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করব। সেটা প্রশাসনিক হবে এবং সেখানে সে বিষয়গুলো থাকবে।’
অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকদের ওপর হামলা মানা যায় না। বিশেষ করে নারী শিক্ষকদের ওপরও হামলা হয়েছে। আমরা দেখব, তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’
এদিকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের পর আজ সকালে সীমিত সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাসে আসেন। ক্লাস-পরীক্ষা আজও বন্ধ ছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করেন।
ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারীকরণ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক আবুল হাসেম ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজিব ও উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলামকে হামলার জন্য দায়ী করেছেন।
গত রোববার দুপুরে ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারীকরণের দাবিতে কলেজের ভেতরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় দুজন নিহত হন। এদের মধ্যে একজন ওই কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এবং অন্যজন স্থানীয় মাছ বিক্রেতা সফর আলী। ঘটনার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় আরো অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এই ঘটনার পর ফুলবাড়ীয়া পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল রাতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়।