গৃহকর্মীকে ধর্ষণ, বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

ঝালকাঠি জেলা বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক কবির হোসেন জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নলছিটি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আদালতের বিচারক মো. হুমায়ুন কবির অভিযোগপত্রটি নথিতে শামিল করেন। আগামী ১২ জুলাই মামলার পরবর্তী তারিখে অভিযোগপত্রটি ঝালকাঠির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে বলে জানান কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির।
নলছিটির শুকতারা ব্রিকসের মালিক বিএনপি নেতা কবির হোসেন জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১-এ মামলাটি দায়ের করেন নির্যাতিত ওই গৃহকর্মী। আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. শফিকুল করিম নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করার নির্দেশ দেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নলছিটি থানায় মামলাটি লিপিবদ্ধ করা হয়। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া নলছিটি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামানকে। তদন্তকালে ঝালকাঠির পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহার নির্দেশে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার এস এম মাহামুদ হাসান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে ঘটনার সঙ্গে বিএনপি নেতা কবির হোসেন জোমাদ্দারের সম্পৃতা পায় পুলিশ। অবশেষে আজ বুধবার দুপুরে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বিএনপি নেতা কবির হোসেনের বাড়ি নলছিটি উপজেলায়। চার বছর আগে প্রতিবেশী এক কৃষকের মেয়েকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে বাড়িতে নিয়ে যান। ওই মেয়েকে তিনি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ দেন। বর্তমানে মেয়েটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। গত বছরের ২৭ জুলাই রাতে মেয়েটি ওই বাড়িতে বসে লেখাপড়া করছিল। এ সময় কবির হোসেন তাকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে নিজের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর বিভিন্ন সময় মেয়েটিকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন কবির। এ ঘটনা তার পরিবারের অন্য কারো কাছে না বলার জন্য চাপ দেন তিনি। এমনকি কাউকে জানালে তার বাবা-মাকে হত্যা করার হুমকি দেন।
মামলার বাদী গৃহকর্মী জানায়, একপর্যায়ে সে অন্তঃসত্ত্বা হলে কবির জোর করে তার গর্ভপাত ঘটায়। বিষয়টি জানাজানি হলে কবির তাকে রেজিস্ট্রি ছাড়াই বিয়ে করার প্রস্তাব দেন বাবা-মায়ের কাছে। কিন্তু তাকে বিয়ে না করে ফের ধর্ষণ করেন। এক সময় তার মা অসুস্থ হলে তাকে দেখতে বাড়ি যায়। সেখান থেকে আর কবির জোমাদ্দারের বাড়িতে ফিরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। এতে কবির ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে চুরির মিথ্যা মামলা করে বলে ওই গৃহকর্মী দাবি করে। ওই মামলায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি আদালতে হাজির হলে বিচারক তাঁকে জেলহাজতে পাঠান। গত ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন।
ওই গৃহকর্মীর বাবা অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়েকে রেজিস্ট্রি ছাড়াই বিয়ে করেন কবির জোমাদ্দার। কিন্তু এখন তিনি বিয়ের কথা অস্বীকার করছেন। উল্টো তাঁদের পরিবারের নামে একটি চুরি মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। এলাকার কারো কাছে নালিশ করে কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না। কারণ তিনি (কবির হোসেন জোমাদ্দার) পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ম্যানেজ করেছেন। তাই বাধ্য হয়ে তাঁর মেয়ে আদালতে মামলা করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নলছিটি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, গৃহকর্মীকে ধর্ষণের ঘটনায় কবির হোসেন জোমাদ্দারকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযুক্ত কবির হোসেন জোমাদ্দার ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
এ ব্যাপারে কবির হোসেন জোমাদ্দার বলেন, ‘ওই গৃহকর্মী একজন চোর। চুরির ঘটনা ধরা পড়ায় সে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। এলাকার সবাই বিষয়টি জানে।’