উদ্বোধনের পরদিন থেকেই বন্ধ জলাধারের পানি সরবরাহ

নেত্রকোনা পৌরসভার বাসিন্দাদের জন্য অনেক ঘটা করে নির্মাণ করা হয়েছিল দুটি ওভার হেড পানির ট্যাঙ্ক বা উচ্চ জলাধার। তবে উদ্বোধনের পরদিন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় এ দুই জলাধার থেকে পানি সরবরাহ। ফলে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা দুটি জলাধার পৌরবাসীর কোনো কাজেই আসছে না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, দায়িত্বে অবহেলা, ঠিকাদারের বেশি মুনাফা লাভের আশায় শিডিউল অনুযায়ী যথাযথভাবে নির্মাণকাজ না করা কিংবা নির্মাণে ত্রুটি থাকায় নেত্রকোনা পৌরসভায় নির্মিত দুটি জলাধার নাগরিকদের কোনো কাজে আসছে না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক দিন ধরেই পৌর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা পানীয় জলের সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার দাবি জানিয়ে আসছিল স্থানীয়রা। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌর কর্তৃপক্ষ ২০১১-১২ অর্থবছরে ‘মাঝারি শহর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সেক্টর’ (জিওবি-এডিবি) প্রকল্পের আওতায় দুটি পানির ওভার হেড ট্যাঙ্কি (উচ্চ জলাধার) নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। পৌর কর্তৃপক্ষ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যৌথভাবে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে জেলা শহরের মোক্তারপাড়ায় এবং সাতপাই কলেজ রোডে দুটি জলাধার নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করে।
মোট ছয় লাখ ৮০ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন দুটি উচ্চ জলাধার নির্মাণের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জানুয়ারি মাসে দুটি ওভার হেড ট্যাঙ্কির নির্মাণকাজ শেষ হলে পৌর মেয়র প্রশান্ত কুমার রায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অনেক ঘটা করে দুটি ওভার হেড ট্যাঙ্কির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধনের পরদিন থেকেই রহস্যজনক কারণে জলাধার দুটির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পৌরবাসীকে আগের মতোই দিনে মাত্র দুবার নির্ধারিত সময়ে পানি সরবরাহ করা হয়। কোনো কারণে বিদ্যুৎ না থাকলে বন্ধ থাকে পানি সরবরাহ। তখন পানির জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নেত্রকোনার সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল বলেন, প্রথম শ্রেণির নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য পৌর নাগরিকরা নিয়মিত কর দিচ্ছেন। নাগরিকদের সেই করের টাকায় দুটি ওভার হেড ট্যাঙ্কি নির্মিত হলেও উদ্বোধনের পরদিন থেকেই তা বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়টি অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখতে হবে।
এ ব্ষিয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা পৌরসভার পানি সরবরাহ শাখার প্রকৌশলী নৃপেন্দ্র চন্দ্র সরকার জানান, গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি তুলে জলাধার দুটি পূর্ণ করতে সময় লাগে আট ঘণ্টা। এতে বিদ্যুৎ খরচ হয় বেশি। কিন্তু জলাধার দুটি থেকে পানি ছাড়া হলে তা ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। এ জন্য জলাধার দুটিতে পানি তোলা এবং তা থেকে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুন্নবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, এ মুহূর্তে আরো দুটি গভীর নলকূপ বসাতে হবে এবং আরো দুটি উচ্চ জলাধার নির্মাণ করতে হবে। তাহলেই সার্বক্ষণিক জলাধার দুটি চালু রাখা সম্ভব হবে এবং বিদ্যুৎ চলে গেলেও পানি সরবরাহ বন্ধ থাকবে না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।