কিশোরী বীথির অস্ত্রোপচার শিগগিরই

অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত কিশোরী বীথি আক্তারকে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। কয়েক দিনের মধ্যেই তার অস্ত্রোপচার হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বীথির বাবা আবদুর রাজ্জাককে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি শুরু করেছেন তার বাবা। শুরুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসা করার ঘোষণা দিলেও ওষুধপত্র নিজের টাকায় কিনতে হচ্ছে বলে জানালেন আবদুর রাজ্জাক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজ শুক্রবার বীথির বাবা আবদুর রাজ্জাক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ডাক্তার এসে বলে গেছেন, আগামী সপ্তাহে স্তনের অপারেশন করা হবে। তাই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তবে ওষুধপত্র আমাদের কিনতে হবে।’
আবদুর রাজ্জাক বলেন, বৃহস্পতিবার চিকিৎসক তাঁকে বলে গেছেন, আগামী সপ্তাহে বীথির অস্ত্রোপচার করা হবে। এ পর্যন্ত তাঁর শাহবাগ শাখায় পূবালী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বীথির জন্য দেশ-বিদেশ থেকে ১০ হাজার টাকা এসেছে। এ ছাড়া বিকাশের মাধ্যমে আরো প্রায় ৪৫ হাজার টাকা সাহায্য পেয়েছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিনা খরচে চিকিৎসা করাবে বলায় এখন আর কেউ সাহায্য করে না। এতে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বীথির চিকিৎসক অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
গত সপ্তাহে বীথির শরীরে তিন ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করেন চিকিৎসকরা। এ কারণে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে পৃথকভাবে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে অস্ত্রোপচারের জন্য কিশোরীকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসক ফরিদ উদ্দিন।
গত ২ মে বীথির চিকিৎসক বিএসএমএমইউর অ্যান্ডোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস ও হরমোন) বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘বীথির চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা বীথির পরীক্ষার পর তার সমস্যাগুলো বিশেষ কোনো রোগের মধ্যে ফেলতে পারছি না। আসলে তার তিনটা সমস্যা। এ কারণে হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। সমস্যাগুলো জন্মগত। বাংলাদেশে এ ধরনের রোগী এই প্রথম দেখলাম।’
মো. ফরিদ উদ্দিন বলেছিলেন, ‘এ পর্যন্ত হরমোনের যেসব পরীক্ষা করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, হরমোন স্বাভাবিক রয়েছে। এ ছাড়া হরমোনের আরো কিছু পরীক্ষা বাকি আছে। সেগুলো হয়ে গেলে আরো কিছু বিষয় হয়তো জানা যাবে। আমরা আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যে একটা ভালো ফল আসবে।’
ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বীথির স্কিন ও স্তনের চিকিৎসার জন্য আলাদা মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে কাজ চলছে। আমরা প্রথমে তার স্তনের সার্জারি করার কথা ভাবছি। তার পর মুখের লোমের চিকিৎসা এবং সবশেষে দাঁতের চিকিৎসা করা হবে। দাঁতের চিকিৎসায় অনেক দিন সময় লাগবে। আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে স্তনের সার্জারি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে বীথিকে দেখে গেছেন। তাঁরা সার্জারি করার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছেন।’
গত ১৬ এপ্রিল থেকে বিএসএমএমইউর অ্যান্ডোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস ও হরমোন) বিভাগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিনের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছে বীথি। টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার জয়ভোগ গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের তিন সন্তানের মধ্যে বড় বীথি। জয়ভোগ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।