সিঙ্গাপুরফেরত পাঁচ 'জঙ্গি' রিমান্ডে

বাংলাদেশে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো পাঁচ জঙ্গিকে সাতদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
রিমান্ডকৃতরা হলেন মো. মিজানুর রহমান ওরফে গালিব হাসান (৩৮), মো. রাহা মিয়া পাইলট (২৯), মো. আলমগীর হোসেন (৩১), মো. তানজিমুল ইসলাম (২৪) ও মো. মাসুদ রানা ওরফে সন্টু খান (৩১)।
আজ বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে তাঁদের হাজির করে রামপুরা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মুনছুর আলী। অপরদিকে আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবী এস এম এ বারেক রিমান্ডের আবেদন বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
আইনজীবী শুনানিতে বলেন, তাঁরা এ ঘটনার সাথে যুক্ত না। তাঁরা সিঙ্গাপুরে বৈধভাবে ছিলেন, মাঝে মধ্যে বাংলাদেশে তাঁরা আসতেন। এ পর্যায়ে এ রিমান্ডের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আলী মাসুদ শেখ সবার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে আট বাংলাদেশিকে আটক করেছে সিঙ্গাপুরের সরকার। গত মাসে আন্তনিরাপত্তা আইনে (আইএসএ) তাদের আটক করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে ফিরে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল আটক ব্যক্তিদের। বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই ছিল এদের উদ্দেশ্য।
সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইটস টাইমস জানায়, গত এপ্রিল মাসে ওই আট ব্যক্তিকে আটক করে সিঙ্গাপুর সরকার। আট বাংলাদেশিই সিঙ্গাপুরে কাজ করতেন। এঁদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোগাযোগ আছে। আটক ব্যক্তিদের বয়স ২৬ থেকে ৩৪ এর মধ্যে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজেদের সংগঠনকে এঁরা ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ (আইএসবি) বলে দাবি করেছেন। একইসঙ্গে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ইচ্ছের কথাও জানিয়েছেন। তবে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে আইএসে যোগ দেওয়া তাঁদের জন্য কঠিন ছিল। তাই তাঁদের পরিকল্পনা ছিল, নিজেদের দেশে গিয়ে সহিংসতা করার মাধ্যমে সরকার উৎখাত করা। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আইএসের অধীন খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা।
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, আটক ব্যক্তিরা দেশে গিয়ে সম্ভাব্য হামলার ক্ষেত্রগুলোও চিহ্নিত করে ফেলেন। তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের জন্য অর্থ তহবিলও সংগ্রহ করেন। এ ধরনের তহবিলও আটক করা হয়েছে। তবে তার পরিমাণ কত, তা জানায়নি সিঙ্গাপুর সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, আটক এ দলের নেতার নাম রহমান মিজানুর (৩১)। অন্যরা হচ্ছেন মামুন লিয়াকত আলী (২৯), সোহাগ ইব্রাহীম (২৭), মিয়া রুবেল (২৬), জামান দৌলত (৩৪), ইসলাম শরিফুল (২৭), জাবাথ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর (৩০) ও সোহেল হাওলাদার ইসমাইল হাওলাদার (২৯)।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘আটক আইএসবির সদস্যদের সিঙ্গাপুরে কাজকর্ম নিয়ে তদন্ত চলছে। দলটির নেতা রহমান মিজানুর জানিয়েছেন, আইএসের নির্দেশনা পেলেই যেকোনো জায়গায় তিনি হামলা করতে পারেন। যদিও সিঙ্গাপুর এ ধরনের হামলার লক্ষ্যবস্তু কি না, তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই।’
আটক ‘আইএসবি’ নেতা রহমান মিজানুরের কাছ থেকে কিছু দলিল উদ্ধার করেছে সিঙ্গাপুর পুলিশ। ‘উই নিড ফর জিহাদ ফাইট’ শীর্ষক কাগজপত্রে হামলার লক্ষ্যবস্তু কারা, তাদের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তালিকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সাংবাদিকও আছেন।
১৩ ধরনের পেশা-বর্ণের মানুষকে হত্যার জন্য পরিকল্পনার কথা বলা হয়। তালিকার ওপরে লেখা, ‘শত্রু : যাদের হত্যা করা প্রয়োজন। এঁরা হচ্ছে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ, সিভিল ইনফরমেশন ডিফেন্স (সিআইডি), এয়ারফোর্স, নেভিফোর্স, এমপি (সম্ভবত সংসদ সদস্য), মন্ত্রী, চেয়ারম্যান (কিসের তা বলা নেই), সরকারি কর্মকর্তা (সচিব পর্যায়), লিডার্স অব গভর্নমেন্ট রিপাবলিক (কোন দলের নেতা পরিষ্কার করা নেই), গণমাধ্যমকর্মী, অবিশ্বাসী (হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, নাস্তিক, মুনাফিক ইত্যাদি) ।’
ওই তালিকার পাশাপাশি অস্ত্র ও গোলাবারুদবিষয়ক বইও উদ্ধার করা হয় আটকদের কাছ থেকে। এর মধ্যে একটি বাংলা বইও আছে, যেখানে লেখা, ‘কীভাবে ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিস্ফোরক বানাতে হয়?’
আটজন আটক হওয়ার পর আরো পাঁচ বাংলাদেশি কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিঙ্গাপুর সরকার। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই পাঁচজনের সঙ্গে আইএসের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।