রাবি শিক্ষক সমিতির আন্দোলন ‘লোক দেখানো’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার প্রতিবাদে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেকে শিক্ষক সমিতির আন্দোলনকে ‘লোক দেখানো’ বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনদিন আন্দোলন চলার পর আজ মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় রাবি শিক্ষক সমিতি। অন্যদিকে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বেলা ১১টা থেকে সব বিভাগের ক্লাস বর্জনের ডাক দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আজম শান্তনু বলেন, ‘এর আগে গত শনিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আমরা কর্মসূচি স্থগিত করে সোমবার উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে সাত দিনের সময়ও বেঁধে দিয়েছি । আর এই সাতদিনের মধ্যে যদি প্রশাসন হত্যাকারীদের বিচার করতে না পারে তাহলে আমরা আবার আন্দোলনে নামব।’
তবে এ সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। শিক্ষক সমিতির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. মুসতাক আহমেদ বলেন, ‘আন্দোলন এগুলা কিছু না, এগুলা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র, লোক দেখানো। এগুলা প্রশাসন যেভাবে চাচ্ছে, শিক্ষক সমিতি সেভাবেই কর্মসূচি দিচ্ছে। প্রথম যে দিন শিক্ষক সমিতির জরুরি সভাটা হয়, সেখানে তারা এক-দুই ঘণ্টার একটা প্রস্তাব নিয়ে আসছিল। তখনই আমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে যে, শিক্ষক সমিতি চাচ্ছে না ক্যাম্পাসটা বন্ধ থাক বা এটা নিয়ে আন্দোলন হোক। এখানে শিক্ষককের চেয়ে বড় হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। শিক্ষকদের জীবন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের কাছে কিছুই না। মূল্যহীন, একেবারেই মূল্যহীন।’
ড. মুসতাক আহমেদ আরো বলেন, ‘প্রথম দুই-এক ঘণ্টার কর্মসূচিটা বেড়ে তিনদিন হয়েছে। কারণ সেখানে সাধারণ যে শিক্ষকরা ছিলেন তাঁদের কারণে। না হলে সেখানেই আন্দোলন শেষ হয়ে যেত। আন্দোলন তুলে নেওয়ার ফলে যেটা হয়েছে, সেটা হলো এখন আর কোনো চাপ রইল না। চাপটা এই জন্য দরকার ছিল, এই চাপে পড়ে রাষ্ট্রযন্ত্র সুষ্ঠু তদন্তে নামত। কিন্তু এখন যেখানে শিক্ষকরাই আন্দোলন থেকে সরে গেছেন, সেখানে রাষ্ট্রের আর মাথাব্যথা কী!’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তমাশ্রী দাস বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির এমন সিদ্ধান্তে আমরা খুবই হতাশ। কারণ যেখানে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, আন্দোলন এখন আরো বেগবান হওয়ার কথা ছিল; সেখানে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসছে। রাষ্ট্রে একের পর এক হত্যা হচ্ছে। আন্দোলন জোরালো না হলে এ হত্যারও কোনো বিচার হবে না। যেমনটা আগেরগুলোর ক্ষেত্রে হয়নি। এ রকম পরিস্থিতিতে রাবি শিক্ষক সমিতির এই সিদ্ধান্তে এত দিনের কর্মসূচিকে দায়সারা মনে হয়েছে।’
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রেজাউল স্যারের হত্যার প্রতিবাদ ও দ্রুত বিচার দাবিতে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস বন্ধ রেখে ছাত্রবিক্ষোভে যোগ দিতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়েছি। ইংরেজি বিভাগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ছাত্রজোট ও সাংস্কৃতিক জোট যৌথভাবে সব বিভাগে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করবে। দুপুরে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।’
গত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
পরিবারের সদস্যরা জানান, অধ্যাপক রেজাউল করিম প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে শালবাগান মোড়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে উঠতেন। অন্যান্য দিনের মতো শনিবার সকালে নাশতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশে তিনি বাসা থেকে বের হন। মাত্র ১০০ গজ দূরে শালবাগান মোড়ের গলির মধ্যে দুর্বৃত্তরা তাঁকে পেছন থেকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।