নেত্রকোনায় ট্র্যাজেডি দিবস ৮ ডিসেম্বর

৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনার ইতিহাসে একটি রক্তক্ষরণময় দিন। শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে প্রতি বছর ফিরে ফিরে আসে দিনটি। ২০০৫ সালে আজকের এই দিনে সকাল বেলা বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী নেত্রকোনা জেলা সংসদ কার্যালয়ের সামনে চলছিল ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা হানাদার মুক্ত দিবসের প্রস্তুতি। এমন সময় এক আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন জেএমবি।
এতে প্রাণ হারান নেত্রকোনা উদীচীর সহসাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদীপ্তা পাল শেলি, মোটরসাইকেল কারিগর যাদব দাস, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী রানী আক্তার, মাছ বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন, শ্রমিক রইছ মিয়া, ভিক্ষুক জয়নাল ও আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আল বাকি মো. কাফিসহ ৮ জন। আহত হন অর্ধশতাধিক। তারপর চলে নানা নাটকীয়তা। চলে যাদব পরিবারসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর নানা হয়রানি। তারপর গণমাধ্যম কর্মী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা প্রমাণ করেন যাদব জঙ্গি নন।
এদিকে ঘটনার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বজনহারা পরিবারগুলো এখনও অসহায় হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ সব পরিবার সরকার বা কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান থেকে তেমন সাহায্যও পাননি।
নিহত খাজা হায়দার হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, ‘আমার পরিবারে স্বামীই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। কৃষি জমি না থাকায় দুই সন্তানের লেখাপড়া ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আজ পর্যন্ত সরকার বা স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা পাইনি।’
দিনটি উপলক্ষে নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস উদযাপন কমিটি ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ, ৯টা ৩০ মিনিটে উদীচী কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ১০টা ৪০মিনিট থেকে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত পাঁচ মিনিট স্তব্ধ নেত্রকোনা (রাস্তায় দাঁড়িয়ে সর্বস্তরের মানুষের নীরবতা পালন), বেলা ১১টায় নেত্রকোনার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হতে প্রতিবাদ মিছিল, বেলা ১২টায় শহীদদের কবর জিয়ারত, শ্মশানের স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শহীদদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ। বিকেল ৪টায় নেত্রকোনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং তথ্য চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে।
উদীচী নেত্রকোনা জেলা সংসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বাচ্চু বলেন, ‘সংস্কৃতিকর্মীরা সবসময় সত্য-সুন্দর অসাম্প্রদায়িক মানবতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা বলে। তাই উগ্র ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নেত্রকোনার উদীচী, যশোরের উদীচী, রমনার বটমূল, ময়মনসিংহের সিনেমা হল, ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভাসহ বিভিন্ন স্থানে তারা বোমা হামলা করে। আমরা মনে করি, এই উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠী, ধর্মান্ধ মৌলবাদি ও যুদ্ধাপরাধীরা একই সুতোয় গাঁথা। তাই আমাদের সবাইকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এই হিংস্র হায়েনাদের প্রতিহত করতে হবে।’