তিনটিতেই নৌকার বিজয়, জরিপের বরাতে জয়

বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা জয় পাবেন বলে একটি জরিপের বরাত দিয়ে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক (আইসিটি) উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
এই তিন সিটির নির্বাচনের ঠিক একদিন আগে আজ রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী-তনয় একটি জরিপের ফল প্রকাশ করে এই দাবি করেছেন। পুরো জুলাই মাস ধরে তিন সিটিতে এই জরিপ চালিয়েছে রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আরডিসি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
জরিপের ফল প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে, ‘বরিশালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ৪৪ ভাগ, রাজশাহীতে খায়রুজ্জামান লিটন ৫৮ ভাগ এবং সিলেটে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ৩৩ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবেন।’
তবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক (আইসিটি) উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘যেহেতু জরিপগুলো গত এক মাস ধরে করা হয়েছে এবং এর মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা জোরেশোরে চলেছে, তাই জরিপ ও নির্বাচনের ফলে কিছুটা তফাৎ হতে পারে। কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসী যে, বরিশাল ও রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ বিশাল ব্যবধানে জয়ের পথে। যদিও সিলেটে আমরা কিছুটা এগিয়ে আছি, এ মুহূর্তে আসলে কাউকেই বিজয়ী হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।’
আগামীকাল সোমবার এই তিন সিটিতে ভোট হতে যাচ্ছে। ভোট শুরু হবে সকাল ৮টায়। বিএনপির পক্ষ থেকে এসব নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ করা হচ্ছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পরও পুলিশ ও প্রশাসন অতি উৎসাহী হয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ বিএনপি নেতাদের। যদিও নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে।
তবে বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের পেজ থেকে এ ফল প্রকাশ করে বলেন, ‘বিএনপি অনেক ধরনের অভিযোগ করতে থাকে, কিন্তু আসল কথা হচ্ছে তাদের কোনো জনপ্রিয়তাই নেই। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন দিন দিন বাড়ছে। নির্বাচনী লড়াইয়ে বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের জন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই না।’
প্রধানমন্ত্রী-তনয় দলীয় নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা, বিএনপি ভোটকেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিয়ে সেই দায় আমাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা চালাবে। আপনারা সবাই বিএনপি নেতাদের এইরূপ ষড়যন্ত্রের ফোনালাপ সম্প্রতি শুনেছিলেন গাজীপুর নির্বাচনের সময়। বিএনপির প্রার্থীরা যতই ভোটারদের কাছে যান, ততই তারা বুঝতে পারেন তাদের দল বাংলাদেশের মানুষদের থেকে কতটা দূরে সরে গিয়েছেন। তাই আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের একমাত্র কৌশল।’
জরিপের অন্যান্য দিক
বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত পাঁচ বছর আরডিসির মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। ২০১১ সালের আদমশুমারির বয়স সম্পর্কিত তথ্যের বিন্যাস অনুযায়ী এই জরিপের ফল উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
তিন সিটির নির্বাচন নিয়ে জরিপে আরো বলা হয়েছে, বরিশালে বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার ১৩ শতাংশের কিছু ভোট বেশি পেতে পারেন। অর্থাৎ তাঁর চেয়ে ৩০ ভাগ ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ জয় পাবেন।
জরিপ চলাকালে এখানে সিদ্ধান্তহীন ছিলেন সাড়ে ২৩ ভাগ ভোটার। অর্থাৎ এসব ভোটার কাকে ভোট দেবেন, তা ঠিক করেননি। এখানে জরিপে অংশ নিয়েছেন মোট এক হাজার ২৪১ জন ভোটার।
বরিশাল সিটির মোট ভোটার দুই লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১২৩টি। বরিশালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ছাড়াও মেয়র পদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দলীয় প্রার্থী ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আরডিসির জরিপ অনুযায়ী, এরা সবাই মিলে এক ভাগেরও কম ভোট (০.৮ ভাগ) পাবেন।
আরডিসির জরিপ অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন রাজশাহী সিটির আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন। তাঁর সম্ভাব্য প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সেখানে ১৬ দশমিক ৪ ভাগ ভোট পেতে পারেন। অর্থাৎ জাতীয় নেতা শহীদ কামারুজ্জামানের ছেলে খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীর বর্তমান মেয়রের চেয়ে সাড়ে ৪১ ভাগের বেশি ভোট পেয়ে পাস করবেন। কাকে ভোট দেবেন তা ঠিক করেননি এমন ভোটারের সংখ্যা এই সিটিতে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। এখানে জরিপ চালানো হয়েছে, এক হাজার ২৯৪ জন ভোটারের মধ্যে।
রাজশাহী সিটির মোট ভোটার তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। তাঁদের জন্য ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৩৮টি। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জরিপে দাবি করা হয়েছে, এসব প্রার্থী মিলে এক ভাগের কাছাকাছি (০.৯ ভাগ) ভোট পেতে পারেন।
জরিপের ধারণা অনুযায়ী, সিলেটে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে বিএনপি প্রার্থীর একটি ভালো ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই হতে পারে। এখানে নৌকা মার্কার প্রার্থী কামরানের ৩৩ ভাগ ভোটের বিপরীতে ধানের শীষের আরিফুল হক চৌধুরী ২৮ দশমিক ১ ভাগ ভোট পেতে পারেন বলে দাবি করা হয়েছে।
জরিপ চলাকালে এখানে ২৩ ভাগ ভোটার সিদ্ধান্ত নিতে পারে পারেননি, তাঁরা কাকে ভোট দেবেন। এই জরিপটি করা হয়েছে এক হাজার ১৯৬ জন ভোটারের সাক্ষাৎকার নিয়ে। সিলেটের সিটির মোট ভোটার তিন লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। তাঁদের জন্য ভোটকেন্দ্রে থাকছে ১৩৪টি।
সিলেটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বাসদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দুই প্রার্থীসহ তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে আছেন। জরিপে দাবি করা হয়েছে, এঁরা এক ভাগের বেশি ভোট (১ দশমিক ৩ ভাগ) ভোট পাবেন।
গোটা জরিপটিতে ভুলের মাত্রা ধরা হয়েছে কমবেশি আড়াই ভাগ।