মানিকগঞ্জে ‘তেরশ্রী গণহত্যা’ দিবসে শ্রদ্ধা

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ‘তেরশ্রী গণহত্যা’ দিবস ছিল মঙ্গলবার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও এ দেশীয় দোসরা তেরশ্রী, সেনপাড়া, বড়রিয়া এবং বড়বিলা গ্রামের ঘুমন্ত মানুষের ওপর নারকীয় তাণ্ডব চালায়। নির্বিচারে গুলি, বেয়নেট চার্জ ও বাড়ি ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে তেরশ্রী জমিদার সিদ্ধেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরী, অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।
কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল এই তেরশ্রী গ্রাম। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়তা ছিল এই গ্রামবাসীর।
পল্লী হলেও গ্রামবাসীর সচেতনতায় মানিকগঞ্জ জেলার প্রথম কলেজ এই গ্রামেই প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই কলেজকে কেন্দ্র করে পশ্চাতপদ চেতনার অপশক্তির প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় বিভেদ সৃষ্টি করা হয়। এরই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও দোসরা শীতের কুয়াশা ঘেরা ঘুমন্ত মানুষের ওপর চালায় ছয় ঘণ্টার এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় গ্রামের পর গ্রাম।
স্বাধীনতার পর থেকেই গ্রামবাসী এই ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন। প্রতি বছর নানা আয়োজনে ‘তেরশ্রী গণহত্যা’ দিবস পালন করে গ্রামবাসী।
তাদের দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগে তেরশ্রী মোড়ে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে জাতীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং কালো ব্যাচ ধারণসহ নানা আয়োজনে দিনটি স্মরণ করে এলাকাবাসী। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে স্মৃতিস্তম্ভের পাশে একটি মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর ও লাইব্রেরী স্থাপনের দাবি করেছেন নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন জানালেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে এই বছরই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের পাশে একটি লাইব্রেরি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জাদুঘর নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু করা হবে।
জমিদারপুত্র সমেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরী বলেন, জমিদার প্রাসাদের ভগ্নদশা স্মৃতি চিহ্ন আকড়ে ধরে এখনো বেঁচে আছে আমার পরিবারের সদস্যরা। স্বাধীনতার এত বছর পরও শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি না পাওয়ার বেদনা রয়েছে তাদের।
সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করা হয়েছে। জমিদার পরিবারকে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি দাবি করেন তিনি