প্রেমিকের বিয়ের খবরে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা!

নেত্রকোনায় রুমা আক্তার (১৭) নামে এক কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রুমা সদর উপজেলার বালুয়াকান্দা গ্রামের লিটন মিয়ার মেয়ে। সে নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ মানবিক শাখার ছাত্রী ছিল।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে পুলিশ লিটন মিয়ার বাড়ির সামনের পুকুরপাড়ের একটি আমগাছের ডাল থেকে লাশটি উদ্ধার করে। একই সঙ্গে ওই ছাত্রীর রেখে যাওয়া একটি দিনপঞ্জি, চিঠি ও তাঁর প্রেমিকের রেখে যাওয়া দুই কপি ছবি জব্দ করা হয়।
ঘটনায় নিহত মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে নেত্রকোনা মডেল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা দায়ের করেছেন।
নিহতের পরিবারের সদস্য স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, কলেজছাত্রী রুমা সঙ্গে পাশের গ্রাম সাতবুড়িকান্দার নেত্রকোনা সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সোহান মিয়ার (১৯) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সম্প্রতি উভয় পরিবারের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে সোহানের পরিবার এ নিয়ে রুমার পরিবারকে বিভিন্ন সময় দোষারোপ করে আসছিল। কিছুদিন আগেও সোহানের বাবা মঞ্জিল মিয়া ও চাচা কামাল মিয়াসহ তাঁদের পরিবারের বেশ কয়েকজন রুমাদের বাড়িতে এসে রুমাসহ পরিবারের লোকজনকে শাসিয়ে যায়। এরপর সোহানের পরিবার জেলার আটপাড়া উপজেলার অভয়পাশা গ্রামে সোহানের জন্য বিয়ে ঠিক করে। কিন্তু সোহান বিয়েতে রাজি না থাকলেও পরে পরিবারের চাপে মেনে নিতে বাধ্য হয়। শুক্রবার সোহানের বিয়ের কথা ছিল।
রুমার পরিবারের লোকজনের ধারণা, এ খবর পেয়ে রুমা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
আজ রুমা ভোরের নামাজ শেষ করে দিকে বাড়ির সামনে পুকুরপাড়ে একটি আমগাছের নিচু ডালের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ সময় ওই গাছের নিচে প্রেমিক সোহানকে উদ্দেশ করে লেখা রুমার হাতের এক পৃষ্ঠার একটি চিরকুট, সোহানের দুই কপি ছবি ও একটি ডায়েরি পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে সকাল ১০টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় বিকেলে মেয়েটির বাবা লিটন মিয়া বাদী হয়ে সোহানকে আসামি করে নেত্রকোনা মডেল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা করেছেন।
রুমার মা পারুল আক্তার বলেন, ‘শুক্রবার ভোররাতে নামাজ পড়ে রুমা ঘরের বাইরে বের হয়। ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আসতে দেরি হওয়ায় খোঁজ নিলে পুকুরপাড়ে আমগাছের ডালে তাঁর ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সোহান ও তার পরিবারের লোকজনের জন্যই আমার মেয়ে মরেছে। তারা বিভিন্ন সময় আমাদের অপমান করেছে। দুদিন আগেও সোহান আমার মেয়েকে মুঠোফোনে গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাওয়ার কথা বলেছিল। অভিমানে মেয়ে এ কাজ করেছে। আমি এর বিচার চাই।’
এদিকে, সোহানের পাশের বাড়ির লোকজন জানায়, রুমা আত্মহত্যার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সোহান ও তার পরিবারের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পুলিশ এসেও খোঁজে গেছে।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির তৈমুর ইলি বলেন, মেয়েটির মরদেহ নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর পর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। রুমার রেখে যাওয়া চিরকুট ও বিভিন্ন আলামত থেকে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে, সোহানের সঙ্গে প্রেমঘটিত সম্পর্কের কারণেই এ ঘটনা ঘটতে পারে। থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেছেন তাঁর বাবা।