বুড়িগঙ্গায় ভাসমান বেকারি

লঞ্চ ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে থাকে ওই নৌকা। একটু পর অন্য লঞ্চের সামনে। নৌকা ভর্তি বিস্কুট, পাউরুটি, বনরুটি, চানাচুর। কেবল দুই বিক্রেতা কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা ভাসমান বেকারি।
রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টারমিনালে প্রচণ্ড ভিড়। ঈদে বাড়ি ফিরছে মানুষ। ঠাঁই নেই লঞ্চেও। যে লঞ্চটা যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারই পাশে গিয়ে দাঁড়ায় ভাসমান বেকারি। মানুষ ডাকে, ‘ভাই রুটি দেন’, ‘দাম কত’।
আজ বৃহস্পতিবার সদরঘাটে গিয়ে ওই ভিড় দেখা গেল। কাল বাদে পরশু ঈদুল আজহা। মানুষ ফিরছে নিজ এলাকায়, স্বজনদের কাছে। তাই ভিড়বাট্টা কোনো ব্যাপারই না।
ওই ভিড়ের মাঝে টারমিনালে অন্য কোনো খাবারের দোকান চোখে পড়েনি। নেই তেমন হকারও। দূরপাল্লার যাত্রীদের তাই একমাত্র ভরসা এখন ওই ভাসমান বেকারি।
ভাসমান বেকারিতে দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের দিকে পাউরুটি ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন আনোয়ার হোসেন। রুটি, বিস্কুট বিক্রি করার ব্যবসা করেন তিনি।
কথা বলার ফুরসৎ মিলছে না আনোয়ারের। বয়স্করা পাউরুটি বা বনরুটি চাইছে, শিশুরা বিস্কুট। চাহিদা আছে চানাচুরেরও। পাউরুটির আকারও নানা ধরনের। একই ভাবে ছোট আকারের বনরুটি থেকে শুরু করে আছে বিশাল সাইজের বনও। পাউরুটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।
আনোয়ার হোসেন জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই নৌকার উপরে এভাবে বেকারি সামগ্রী বিক্রি করছেন তিনি। ঈদের সময় নৌকাভর্তি করে বেকারি সামগ্রী কিনে ফেলেন। এরপর সদরঘাট এনে লঞ্চযাত্রীদের কাছে এসব বিক্রি করেন। লঞ্চযাত্রার সময় মানুষ কিছু খাবার নিয়ে লঞ্চে উঠতে যায়। এ সময় পাউরুটির চাহিদা থাকে বেশি।
আবদুস সাত্তারের বাড়ি বরিশাল। মতিঝিলে একটি দোকানে কাজ করেন। দুপুর একটার পর ছুটি নিয়ে চলে এসেছেন সদরঘাট। ভাবছেন কত আগে পৌঁছা যায় বাড়ি। এ কারণে দুপুরে খাওয়া দাওয়াও করেননি। লঞ্চ ছাড়বে একটু পর। তাই ওই নৌকা থেকে কিনে নিলেন পাউরুটি। সাত্তার বলেন, ‘ভাই লঞ্চ পেয়েছি। এটাই অনেক। এখন বাড়ি যাব। ক্ষুধা পেয়েছে। টারমিনালে কোনো দোকান নেই। খেতে বা কিছু কিনতে রাস্তায় যেতে হবে। ওই নৌকা থেকেই রুটি কিনে নিলাম।’
লঞ্চ ঘাটের দিকে ছুটে চলা মানুষের ভিড়ের এক কোনায় বেশ কিছু পানির বোতল নিয়ে বসে আছেন সুজন নামের এক কিশোর। দূর থেকে পানির বোতলের দিকে তাকালে মনে হবে যেন নতুন পানির বোতল। সব পানির বোতলের মুখই সুতা বা চিকন দড়ি দিয়ে বাঁধা।
সুজন বলে, ‘এই পানির বোতলে পাম্পের পানি আছে। বোতলগুলো পুরানো। পাম্প থেকে পানি ভরে নিয়া আসছি। এক বোতল পানির দাম ১০ টাকা।’
বোতল দড়ি দিয়ে বাধা কেন জানতে চাইলে সুজন জানায়, পানির বোতল যাতে ঝুলিয়ে রাখা যায় এ কারণে দড়ি লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কত টাকার পানি বিক্রি হয়েছে? সুজন জানায়, ১০০ বোতল পানি বিক্রি করে আবার ১০ বোতল নিয়ে এসেছে এখন।