স্ত্রীকে পাঠানো হলো ‘হজে’, স্বামী শুধু কাঁদছেন

রাজধানীর আশকোনা হজক্যাম্পে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন আবদুস সোবহান। ক্যাম্পে চারদিন অপেক্ষার পর হঠাৎ করে গতকাল শুক্রবার রাতে তাঁর স্ত্রীকে হজে নেওয়ার কথা বলে নিয়ে যান এজেন্সির লোকজন। এর পর থেকে আর স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়নি তাঁর। এখন কিছুক্ষণ পরপর কাঁদছেন তিনি।
আজ শনিবার আশকোনা হজক্যাম্পে কথা হয় আবদুস সোবহানের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে তিনি এখন অবসরে আছেন। স্ত্রীর সঙ্গে হজে যেতে তাঁর অবসর কল্যাণ ভাতার টাকা ও কিছু জমি বিক্রি করেন। দুই বছর আগে হজে যাওয়ার টাকা জমা দিয়েছেন গ্লোব ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্সিকে। হজক্যাম্পে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু গতকাল রাতে স্ত্রীকে হজে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়।
আবদুস সোবহান আরো জানান, চারদিন ধরে স্ত্রীকে নিয়ে হজক্যাম্পে অবস্থান করেন। গতকাল রাতে হঠাৎ করে তাঁর স্ত্রীকে ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে বলা হয়, ‘পরের ফ্লাইটেই আপনাকে পাঠানো হবে’। কিন্তু এর পর থেকে ওই এজেন্সির কোনো লোক আর ফোন ধরছেন না। এমনকি ওই এজেন্সির কেউ আজ সারা দিনে একবারও তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি।
কাঁদতে কাঁদতে সোবহান বলেন, ‘দুই বছর আগে টাকা দিছি স্বামী-স্ত্রী একসাথে হজে যাওয়ার জন্যে কিন্তু আমারে রাইখাই আমার স্ত্রীরে একা পাঠাই দিছে।’
আবদুস সোবহানের সঙ্গে কথা বলার সময় আশকোনো হজক্যাম্পে আরেক নারী হজযাত্রী কাঁদছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জমি বেইচ্যা টেক্যা দিছি, দুই জনের জন্য ছয় লাখ টেক্যাই দিছি। এখন আমাগোরে নিয়ে আইছে। কোনো খোঁজ-খবর নাই, খাওয়া-দাওয়া নাই। কী অবস্থায় আছি আমরা। বলছে, ‘দুপুর পর টিকিট দেওয়া হবে’, এখন পর্যন্ত আর কোনো খবর নাই, আমরা আর কতক্ষণ থাকব বাবা?”
ওই নারীর স্বামী হামেদ আলী জানান, তাঁরা সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থেকে এসেছেন হজক্যাম্পে। ওই এলাকার দাখিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল জিল্লুর রহমানের কাছে তাঁরা হজে যাওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখন আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
এ সময় মোছা. মহিলা বেগম নামের আরেক হজযাত্রী বলেন, ‘আমাদের কইছে ভিসা হইছে, টিকেট হইছে, সব হইছে। নিয়ে আইছে, এখন দেখি এই সব। অনেকবার কইছি প্লেনের টাকাটা ফেরত দেন। আমরা অন্য প্লেনে যাব।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে গ্লোব ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্সির মালিকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
আশকোনা হজক্যাম্পে অবস্থান করা ওই এজেন্সির প্রতিনিধি মো. মাসুদ মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই এজেন্সি আমার নয়, আমার সম্বন্ধি (স্ত্রীর বড় ভাই) খন্দকার শফিকুল ইসলামের। আমাদের অফিস টাঙ্গাইলে। আর আমাদের টিকেট হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা এখনো হাতে পাই নাই। আমরা অন্য এজেন্সি থেকে টিকেট কিনেছি কিন্তু তাও এখনো হাতে পাই নাই।’