সাবেক এমপি, শিল্পপতি হারুনার রশিদ মুন্নু আর নেই

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও বিশিষ্ট শিল্পপতি হারুনার রশিদ খান মুন্নু আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
আজ মঙ্গলবার ভোর ৫টায় বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাসভবন মানিকগঞ্জের গিলন্ড মুন্নু সিটিতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেনএই রাজনীতিবিদ। এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান।
বিশিষ্ট এ শিল্পপতির মৃত্যুতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে গত ২২ জুলাই হারুনার রশিদ খান মুন্নুকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুটা উন্নতি হওয়ায় সেখান থেকে গতকাল সোমবার বিকেলে মানিকগঞ্জের মুন্নু সিটির বাসভবনে তিনি ফিরে আসেন। তিনি স্ত্রী হুরুন নাহার, দুই কন্যা আফরোজা খান রিতা ও ফিরোজা মাহমুদ পারভীনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
প্রয়াত মুন্নু বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে এবং ২০০১ সালে মানিকগঞ্জ-২ ও মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে দুটি আসনে জয়লাভের পর তিনি মন্ত্রীও হয়েছিলেন। জ্যেষ্ঠ কন্যা আফরোজা খান রিতা মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। তিনি বর্তমানে লন্ডন অবস্থান করছেন, সেখান থেকে আগামীকাল সকালে তাঁর ঢাকার ফেরার কথা রয়েছে। তার পরই হারুনার রশিদ খান মুন্নুর দাফন সম্পন্ন হবে।
কনিষ্ঠ কন্যা ফিরোজা মাহমুদ পারভীন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী।
আজ সকালে মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক আবদুল আউয়াল এনটিভি অনলাইনকে জানান, আজ হারুনার রশিদ মুন্নুর মরদেহ ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল বুধবার তাঁর ছয়টি জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এরপর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
তৃতীয় জানাজা হবে এ শিল্পপতির নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ধামরাইয়ের মুন্নু সিরামিকসে। এরপর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে মানিকগঞ্জে। সেখানে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে চতুর্থ জানাজা হবে। তারপর এ রাজনীতিবিদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর জন্মস্থান গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার পাটগ্রামে। সেখানে পাটগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পঞ্চম জানাজা হবে।
ষষ্ঠ ও শেষ জানাজা হবে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মাঠে। তারপর গিলন্ড মুন্নু সিটিতে মসজিদের পাশে বিশিষ্ট এই শিল্পপতিকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
এর আগে আজ সকালে মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক আবদুল আউয়াল জানাজার সময়ও সুনির্দিষ্ট করে জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা লন্ডন থেকে এনটিভি অনলাইনকে জানান, তিনি আগামীকাল ঢাকায় ফিরবেন। তবে কখন ফিরতে পারবেন এখনও নিশ্চিত নয়। তাই পরে পারিবারিকভাবে জানাজার সময় জানিয়ে দেওয়া হবে।
মুন্নু আর্ট প্রেসের মাধ্যমে তাঁর যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিল, তার পূর্ণতা পায় মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। তিনি মুন্নু সিরামিক, মুন্নু জুটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, মুন্নু ফেব্রিকস ও মুন্নু অ্যাটায়ার লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।
মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে রেখেছেন অনন্য অবদান। মুন্নু মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, মুন্নু নার্সিং ইনস্টিটিউট, মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তাঁর উদাহরণ।
তিনি ১৯৩৩ সালের ১৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে মানিকগঞ্জ মডেল হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, জগন্নাথ কলেজ থেকে আইকম ও বিকম এবং প্রাইস ওয়াটার হাউস পিট অ্যান্ড কোম্পানি থেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট (সিএ) কোর্স সম্পন্ন করেন।