শিশু গৃহকর্মীর হাত-পা বেঁধে নির্যাতন

নেত্রকোনা শহরে এক শিশু গৃহকর্মীকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। এই ঘটনায় করা মামলায় গৃহকর্তা ও তাঁর স্ত্রীকে আজ রোববার দুপুরে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন নেত্রকোনা শহরের কুরপাড় এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী টিটু মিয়া ও তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তার। নির্যাতনের শিকার শিশুর নাম স্বর্ণামণি (৮)। গতকাল শনিবার তাকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিশুটির পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, টিটু মিয়ার বাসায় স্বর্ণামণি সাত মাস ধরে কাজ করছিল। কাজে সামান্য ত্রুটি হলেই তাকে বেধরক পেটানো হতো। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসায় ১৮ হাজার টাকা না পেয়ে শিশুর ওপর টাকা চুরি অভিযোগ এনে তাকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে টিটু, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে শিশুটিকে হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করলে সে অচেতন হয়ে পড়ে। গতকাল শনিবার সকালে স্বর্ণামণির চেতনা ফেরার পর তার পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। পরে ওই দিন দুপুরেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু স্বর্ণামণি জানায়, টাকা চুরির মিথ্যা অভিযোগ এনে বাসার মালিক প্রথমে তাকে লাঠি দিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে মালিকের ছেলে তার হাত-পা বেঁধে কোমড়ের বেল্ট খুলে পেটাতে থাকে। এ সময় মালিকের স্ত্রী তার মুখ চেপে ধরেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে সে অজ্ঞান হয়ে যায়।
স্বর্ণামণির বড় বোন ফাতেমা আক্তার জানান, পাঁচ বছর আগে তাদের মা ফুলেছা বেগম মারা যান। চার বছর আগে বাবা রফিকুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে ঘরে রয়েছেন। আগে তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন। অভাব সইতে না পেরে ছোট বোনটিকে মানুষের বাসায় কাজে পাঠান।
নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত সেবিকা জয়শ্রী সরকার বলেন, শিশুটির শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। রক্ত জমাট বেঁধে কালচে আকার ধারণ করেছে।
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. নজরুল ইসলাম ফকির বলেন, শিশুটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সে শঙ্কামুক্ত। তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আরো কয়েকদিন লাগবে।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু তাহের দেওয়ান বলেন, নির্যাতনের ঘটনায় ওই শিশুর চাচা বাদশা মিয়া বাদী হয়ে আজ দুপুরে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এতে বাড়ির মালিক টিটু মিয়া, তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তার ও ছেলে নয়েল মিয়াকে আসামি করা হয়। মামলার পর টিটু মিয়া ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছেলেকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।