নেত্রকোনায় লোডশেডিং, সেচকাজ ব্যাহত

নেত্রকোনায় পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সেচের পানির অভাব দেখা দিয়েছে। এর ফলে সদ্য রোপণ করা ইরি জমি বিবর্ণ হয়ে নষ্ট হওয়ার পথে। চোখের সামনে সেচের পানির অভাবে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফসলের জমি ফেটে বিনষ্ট হতে দেখে কৃষকরা হয়ে পড়ছেন দিশেহারা।
ধান উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে খ্যাত নেত্রকোনার ১০টি উপজেলায় এ বছর এক লাখ ৮০ হাজার ১০১ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। এ পর্যন্ত এক লাখ ৭৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদ করা হয়েছে সাত লাখ ৩৬ হাজার ৬১ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের চারা রোপণ শেষ হতে না হতেই দেখা দিয়েছে তীব্র সেচ সংকট। পল্লী বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে সঠিক সময়ে কৃষকরা জমিতে প্রয়োজনীয় সেচের পানি দিতে না পারায় অনেক জায়গায় জমি শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে সদ্য রোপণ করা চারাগুলো বিবর্ণ হয়ে ক্রমে বিনষ্ট হয়ে পড়ছে। জেলার আটপাড়া, কেন্দুয়া, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও মদন উপজেলায় এ সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে। এতে বোরো ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকরা হয়ে পড়ছেন দিশেহারা। কোথাও কোথাও ডিজেল মেশিনে পানি সরবরাহ করতে দেখা গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য।
বর্তমান সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চলতি বোরো মৌসুমে গ্রাম এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়ার পরও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া তো দূরের কথা, দিন-রাত মিলিয়ে দু-তিন ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না।
জেলার মদন উপজেলার কুলিয়াটি, বড়ইকান্দি, মদন সদর ও আটপাড়া উপজেলার লুনেশ্বর ও বানিয়াজান ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কথা।
দেওগাঁও গ্রামের কৃষক মো. আযম বলেন, ‘সেচের অভাবে আমার প্রায় ২০ কাঠা জমির চারা বিবর্ণ হয়ে গেছে।’ একই গ্রামের কৃষক আবদুল কাদির বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সেচ দিতে পারছি না।’ বানিয়াজান গ্রামের কৃষক মফিজুল ইসলাম জানান, বিদ্যুৎ এই আসে এই যায়, বিদ্যুতের মিসকল সিস্টেমের কারণে অনেকের মোটর জ্বলে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে। মোবারকপুর গ্রামের জামাল মিয়া জানান, দিনভর বিদ্যুৎ থাকে না। রাতেও দুই থেকে তিন ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। বিষ্ণুপুর গ্রামের কৃষক শেকুল মিয়া বলেন, ‘বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে কুন্দা দিয়া ও ডিজেল মেশিনের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করছি।’ মদনের মো. জসিম আহম্মেদ জানান, এ বছর লোডশেডিংয়ের কারণে অপূরণীয় ক্ষতি হবে কৃষকদের।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল বলেন, ‘অনেক এলাকার স্থানীয় কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে প্রায়শই অভিযোগ করছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে তাঁরা জমিতে প্রয়োজনীয় পানি দিতে পারছেন না। আমি সমন্বয় সভায় পল্লী বিদ্যুতের জিএমকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। যেসব জমিতে চারা বিবর্ণ হয়ে গেছে, সেই সব জমিতে বেশি করে সেচের পানি দিতে পারলে চারাগুলো আবার সবুজ হয়ে উঠবে।’
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. মুজিবর রহমান বলেন, ‘নেত্রকোনার ১০টি ও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশাসহ ১১টি উপজেলা নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন। প্রতিদিন ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে, সেখানে আমরা মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছি। ফলে সেচ মৌসুমে লোডশেডিংয়ের সমস্যা হচ্ছে। আশা করি, অচিরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’