গরুর দুধে বুড়িগঙ্গার কচুরিপানা, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

ঢাকা সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরে গরুর দুধ নিয়ে আসার সময় বুড়িগঙ্গা নদীর কচুরিপানা দিয়ে দূষিত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
সম্প্রতি সরেজমিনে কামরাঙ্গীরচর এলাকার খালপাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদীর ওপার থেকে (কেরানীগঞ্জ) নৌকায় করে ড্রামভর্তি দুধ কামরাঙ্গীরচরে প্রবেশ করছে। প্রতিটি নৌকায় চার থেকে পাঁচটি দুধের ড্রাম রয়েছে। নৌকা থেকে সেই ড্রাম নামিয়ে নদীর পাড়ে নেওয়া হচ্ছে। ড্রামের দুধের উপরিভাগে কচুরিপানা দিয়ে রাখা হয়েছে।
এর কারণ জানতে চাইলে দুধ বহনকারী কাজল মিয়া নামের একজন বলেন, এসব কচুরিপানা দুধের ওপরে রাখা হয়েছে যেন পাত্রের দুধ নষ্ট না হয়ে যায়। কিন্তু কচুরিপানা কোত্থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পানা আবার বুড়িগঙ্গা নদী ছাড়া কই পামু? ওই যে দেখেন না নদীর মধ্যে কত পানা দেখা যাচ্ছে।’
কাজল মিয়া আরো জানান, নদীর ওপারে প্রায় ১০ থেকে ১২টি দুধের খামার আছে। সেসব খামার থেকে অনেক ব্যবসায়ী দুধ কিনে নিয়ে এসে নিজেদের খামারের গাভীর দুধ বলে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বিক্রি করেন। তবে অনেক দুধ বিক্রেতা কোম্পানির লোকজন সরাসরি খামার থেকে দুধ কিনে নিয়ে আসে। কিন্তু খুচরা দুধ বিক্রি করলে দাম একটু বেশি পাওয়া যায়। খামার মালিকরা তাদের কাছে দুধ বিক্রি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যার আগে অনেক মানুষ নৌকাতে করে দুধের ড্রাম নিয়ে আসে। আর এখানে এসে তারা নদী থেকে কচুরিপানা তুলে দুধের ওপর দিয়ে নিয়ে যায় বিক্রি করতে। এই দুধ কেনেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই, এ নদীতে চোখের সামনে যত নোংরা, ময়লা দেখেছি, আর পানির রং দেখলেই বুঝা যায় কী আছে এই পানিতে। সেই পানির মধ্যে কচুরিপানা দেওয়া দুধ কোনো দিন কিনি নাই। তবে বাসার জন্য মাঝেমধ্যে দুধের প্রয়োজন হলে ওপারে গিয়ে খামার থেকে দুধ কিনে নিয়ে আসি।’
এ ব্যাপারে এসআইবিএল ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তায়েবা সুলতানা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বুড়িগঙ্গার পানি ব্যবহারের অযোগ্য। কারণ এই পানিতে ভারী ধাতু, ট্যানারির বর্জ্য, নানা রকম আবর্জনা থাকে। তাই সে পানিতে জন্ম নেওয়া কচুরিপানা মানব দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর।’
তায়েবা সুলতানা বলেন, ‘প্রচলিত কিছু নিয়ম অনুয়ায়ী মানুষ দুধে কলাপাতা বা কচুরিপানা ব্যবহার করে। অনেকের ধারণা এতে দুধ মাপার সময় উপচে পড়ে না। আবার অনেকের ধারণা দুধ নষ্ট হয় না। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। তিনি সতর্ক করে বলেন, এ দুধ খাওয়ার ফলে মানুষের পানিবাহিত রোগ যেমন, ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডসহ নানারকম অসুখ হতে পারে।
এ ছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক প্রণব কুমার প্রামাণিক জানান, এখন পর্যন্ত এমন কোনো অভিযোগ তাদের কাছে আসেনি। তবে এ বিষয়ে যদি কেউ অভিযোগ করতে চায়, ল্যাবরেটরিতে দুধের যে পরীক্ষা করা হবে তার খরচ গ্রাহককে দিতে হবে। এরপর প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।