নেত্রকোনায় আহত আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সাহিতপুর বাজার অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল মিয়া আজ সোমবার মারা গেছেন। মৃত্যুর খবরে দুলালের সমর্থকরা ১৫টি বাড়িতে আগুন দিয়েছে বলে জানা গেছে।
ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় মারা যান চেংজানা গ্রামের বাসিন্দা দুলাল মিয়া। তিনি কেন্দুয়া উপজেলার সান্ধিকোনা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুলালের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল ৮টার দিকে তাঁর সমর্থকরা উপজেলার রায়জুরা গ্রামের যুবলীগ নেতা আবু তাহেরসহ ১৫ বাড়িতে লুটপাট করে এবং আগুন দেয়। এতে ওই বাড়িগুলোর ৫৫টি ঘর ও সেখানে থাকা সব মালামাল পুড়ে যায়। আগুন দেওয়ার চার ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর নির্মল সরকার জানান, খবর পেয়েই তাঁরা আগুন নেভানোর জন্য ছুটে যান। তবে ঘটনাস্থলে যাওয়ার রাস্তা বড় যানবাহন চলাচলের উপযোগী না হওয়ায়া তাঁরা সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি। বর্তমানে আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা জানান, এলাকায় এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিভিন্ন সময় সংঘর্ষকে কাজে লাগিয়ে সব সময় অপর একটি পক্ষ লুটপাটের চেষ্টা চালায়।
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত-ওসি) মিজানুর রহমান জানান, সান্ধিকোনা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভুইয়া সাহিতপুর বাজার অটোটেম্পো, অটোরিকশা ও সিএনজিচালক শ্রমিক ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন। প্রায় আড়াই মাস আগে আবু তাহেরকে উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী হত্যা মামলায় নেত্রকোনা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করে। ফলে কমিটি বাতিল করে দেয় জেলা কমিটি। পরে সান্ধিকোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইসলাম উদ্দিনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি অংশের স্থানীয় নেতারা স্ট্যান্ডটি পরিচালনার দায়িত্ব নেন।
এক মাসের মতো জেল খেটে জামিনে বের হন আবু তাহের। গত ২৭ ডিসেম্বর জেলা কমিটি পুনরায় আবু তাহেরকে সভাপতি ও রোকন মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের নতুন কমিটি অনুমোদন দেন। এই কমিটির মেয়াদ দেওয়া হয় ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২৬ জুন পর্যন্ত।
নতুন কমিটির অনুমোদন পেয়ে ২৮ ডিসেম্বর সকালে আবু তাহের ও রোকন মিয়া তাঁর লোকজন নিয়ে স্ট্যান্ড দখলে গেলে ইসলাম উদ্দিনের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এতে প্রায় ১৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে দুলাল মিয়া (৪৫), সফর উদ্দিন (৫০), আন্জু মিয়া (৩০) ও আজিজুল ইসলামকে (৫৫) প্রথমে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁদের অবস্থা গুরুতর হলে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার পর দিন থানায় দুটি মামলা হয়।
বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।