নাসিক নির্বাচনের ভোট শুরু

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এবারই প্রথম স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীরা সরাসরি জাতীয় রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে এই ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তিনটি উপজেলার প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ ভোটার বিকেল ৪টা পর্যন্ত একনাগাড়ে ভোট দেবেন তাঁদের পছন্দের জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ে।
আর কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা তাঁদের দলের কাছ থেকে সমর্থন পেলেও আইনি বাধ্যবাধকতার কারণেই প্রতীক নিয়ে যেতে পারেননি ভোটারের কাছে। তাঁদের লড়তে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের প্রতীকে। একই অবস্থা সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদেরও।
নাসিক নির্বাচনে একজন মেয়রের সঙ্গে ২৭টি সাধারণ ও নয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেয়র পদে সাতজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন ও সাধারণ সদস্যপদে ১৫৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নাসিকে ২৭টি ওয়ার্ডে ১৭৪টি কেন্দ্র ও এক হাজার ৩০৪টি বুথ রয়েছে। মোট চার লাখ ৭৯ হাজার ৩৯২ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪১ হাজার ৫১৪ এবং নারী ভোটার দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৮ জন।
মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হলেও আরো পাঁচজন একই পদে লড়ছেন। তাঁরা হলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ (পাখা), ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ইজহারুল ইসলাম (মসজিদের মিনার), এলডিপির কামাল প্রধান (ছাতা), কল্যাণ পার্টির মেয়র প্রার্থী রাসেল ফেরদৌস সোহেল মোল্লা (হাতঘড়ি)।
নির্বাচনে ১৭৪ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, এক হাজার ৩০৪ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও দুই হাজার ৬০৮ জন পোলিং কর্মকর্তা ভোট গ্রহণে নিয়োজিত আছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩৭টি ভোটকেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই হিসেবে প্রায় ৭৯ ভাগ ভোটকেন্দ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। এসব কেন্দ্রে গোলযোগের পাশাপাশি প্রভাবশালীদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট হাজার সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে যথাযথভাবে পালন করা হয়, সে জন্য প্রতি ওয়ার্ডে আচরণবিধি লঙ্ঘন-সংক্রান্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ২৭ জন নির্বাহী হাকিম (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট) দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ভোট গ্রহণের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিটি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে আরো নয়জন হাকিম (ম্যাজিট্রেট) নিয়োজিত আছেন। নির্বাচনী অপরাধের তাৎক্ষণিক সংক্ষিপ্ত বিচারের (সামারি ট্রায়াল) জন্য ১৪ জন বিচারিক হাকিম (জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) নিয়োজিত রয়েছেন।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২২ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য এরই মধ্যে মাঠে নামানো হয়েছে। এর মধ্যে সাত প্লাটুন কাজ করবে সিদ্ধিরগঞ্জে, বন্দরে পাঁচ প্লাটুন এবং বাকি ১০ প্লাটুন সদরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। ভোট গ্রহণের আগে দুদিন, ভোটের দিন ও ভোট-পরবর্তী একদিনসহ মোট চার দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন থাকবে। নাসিক নির্বাচন সামনে রেখে পরবর্তী সাত দিনের জন্য বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২২ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ২৪ জন পুলিশ ও আনসার নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন, আনসার, র্যাব, কোস্টগার্ড ও বিজিবির মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। সব মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে।
এর আগে ২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল—এ তিনটি পৌরসভা বিলুপ্ত করে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। একই বছর ৩০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী, যিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।